দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে তা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভারত- এমন খবর প্রকাশ পাওয়ার পরপরই দেশে পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রবণতা নতুন নয়। জানা যায়, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বস্তুত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও বর্তমানে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত। তাছাড়া বর্তমানে ভারত ছাড়া আরও বেশকটি দেশ থেকে পণ্যটি আমদানির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কাজেই এখন পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক। দেশে পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতায় স্পষ্ট এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়বে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর দেশে প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। মজুত সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে দেশে পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এর আবাদে জোর দেওয়া হয়। দুই বছর ধরেই দেশে পণ্যটির ফলন আশাব্যঞ্জক। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হলে আমদানিনির্ভরতা কাটবে; পাশাপাশি বাড়তি পেঁয়াজ আমরা রপ্তানিও করতে পারব। কাজেই কৃষকরা যাতে স্বল্প মূল্যে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ ছিল না। ভারত পেঁয়াজ মার্চ মাস পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাওয়া আমাদের সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীর অসৎ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে। তারা জরিমানা করেছে। এতে বাজারে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসলেও পুরোপুরি আসেনি। যে কোনো কিছু হলেই দাম বাড়িয়ে দেওয়ার যে মানসিকতা এটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমেও যদি রিপোর্টিং হয় তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। তবে পেঁয়াজের দাম সহসা কমে যাবে। কারণ এক সপ্তাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করবে। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও বাজারে সব ধরনের সবজিও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। কাজেই কারসাজি করে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।