মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

বর্তমানে অর্থ পাচার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন, ডলারের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশে পুঁজি পাচার এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে হুন্ডির বেলাগাম আধিপত্যের মতো সমস্যায় জর্জরিত। হতাশাজনক ব্যাপার হলো, এমন অপরাধে জড়িত দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান। তাদের অনেকেই রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী। ফলে দেখা যায়, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতায় এ অপরাধ রোধ করা যাচ্ছে না, যার অবসান হওয়া জরুরি। এই পাচারের বেশির ভাগ অর্থ যায় সুনির্দিষ্ট ১০ দেশে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কর কম এবং আইনের শাসন আছে-এমন দেশকেই বেছে নিয়েছে অপরাধীরা। হুন্ডি, চোরাচালান, মোবাইল ব্যাংকিংসহ আরও যেসব পন্থায় মুদ্রা পাচার হচ্ছে, সেগুলোও বন্ধ হওয়া উচিত। যদিও সরকার চাইলে পাচারকারীদের শনাক্ত করা কঠিন কিছু নয়। বিগত প্রায় এক দশক ধরে আমাদের দেশ থেকে আশঙ্কাজনক হারে মুদ্রা পাচার হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হলেও, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেননি সরকার। এমনকি দেশের ভেতরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করেনি। এভাবে চলতে পারে না। অচিরেই জাতির শত্রু মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চারটি প্রক্রিয়ায় মুদ্রা পাচার হচ্ছে- আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে, রফতানি মূল্য কম দেখিয়ে, হুন্ডি ও ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে অব্যাহত লুটপাটের ঘটনায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন না করতে পারার চিত্র আমরা অব্যাহত দেখছি। কিছু ব্যাংকে প্রকাশ্য দিবালোকে অনিয়ম করা হচ্ছে অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। মুদ্রা পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি প্রবণতা। এটি বন্ধ করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফলভাবে শেষ হলে দুর্নীতি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রা পাচার একটি সাধারণ ঘটনা; কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে মুদ্রা পাচার বাড়ছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ফলে এ অবস্থায় মুদ্রা পাচারের সব কারণ খতিয়ে দেখে তা দ্রুত সামাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।