সম্পাদকীয়

আমদানিতে না ঝুঁকে উৎপাদনে মনোযোগ বাড়ান

বর্তমানে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আবাসিকে গ্যাস ব্যবহারকারীরা চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই গ্যাস থাকছে না। যেটুকু পাওয়া যায় তা দিয়ে রান্না করা সম্ভব হয় না। বিকালে বা রাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এ সময় গ্যাস তেমন কাজে লাগছে না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ঘোড়াশালে নতুন একটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কিছু কিছু জায়গায় গ্যাসের চাপ কম থাকছে। দিনে তাদের গ্যাসের চাহিদা ১৮০-১৯০ এমএমসিএফডি। সাধারণত ১৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হলে কোনো ঘাটতি থাকে না। সেখানে দৈনিক ৪০-৬০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করায় বাসাবাড়িতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এদিকে গ্যাস সংকটে ভুগছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানোর ফলে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় বেশ ক্ষতির মুখে রয়েছেন কারখানা মালিকরা। এ ছাড়া রান্নাবান্নার জন্যও পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর বাইরে সিএনজিচালিত পরিবহনের ভিড়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসের সরবরাহ দ্রুত বাড়ানোর কোনো উপায় পেট্রোবাংলার হাতে নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে গ্যাসের এই সংকট সার্বিক অর্থনীতি ও জন জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত কয়েক মাসে গ্যাস সরবরাহে গড় ঘাটতি প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুটি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে সামিট গ্রুপের ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে দিনেদিনে বাড়ছে ভোগান্তি। স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন না বাড়ালে দেশে গ্যাসের সংকট মিটানো সম্ভব হবে না। সরকার স্থানীয় গ্যাস উত্তোলনে ১০ বছর আগে থেকে চেষ্টা করলে হয়তো আজকে গ্যাস সংকট হতো না। তাই অধিক মূল্যের এলএনজি আমদানির দিকে না ঝুঁকে উৎপাদনে মনোযোগ বাড়াতে হবে। এবং এলএনজি আমদানি কমিয়ে সেই টাকা দিয়ে দেশে কূপ খনন করতে হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন ও পুরাতন কূপ থেকে ভালো পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে হলে হয়তো উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা আমদানি বাড়াতে হবে। তাছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button