বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে “বাংলাদেশ”

বাংলাদেশে ডিসেম্বর মানেই বিজয়ের মাস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের দিন ১৬ ডিসেম্বর, যেদিন এক দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে। শুধু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ তা তো নয়, বাঙালি প্রাণপণ যুদ্ধের মাধ্যমে শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে সেই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেন এবং সার্থক হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। তারপর থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দারিদ্র্য কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়; কমেছে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হার। গড় আয়ু বেড়েছে, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। তবে এসব অর্জনের বিপরীত দিকের চিত্র সুখকর নয়: রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবনতি ঘটেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে দুর্বল হয়েছে, ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা, প্রাণবন্ত জাতীয় সংসদ যেন এক অপূরণীয় স্বপ্নের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও বহুলাংশে খর্ব হয়েছে; এমন কিছু আইনকানুন প্রণয়ন করা হয়েছে, যেগুলো একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের পক্ষে প্রতিকূল। মূলত রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দুর্বলতার কারণে গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে; এর পরিণতিতে জনপ্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতি, অনিয়ম, জবাবদিহির অভাব ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে। অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়নি; ফলে খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধের প্রতিকার থেকে ভুক্তভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে; একধরনের বিচারহীনতার পরিবেশ অপরাধবৃত্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। বিশেষত, নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুতরভাবে বেড়েই চলেছে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের পেছনে যেসব স্বপ্ন ছিল; বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে আমরা সঠিক পন্থায় গড়ে তুলতে পারিনি। তাই ৫৩ তম বিজয় দিবসে আমরা পেছন ফিরে তাকানোর তাগিদ অনুভব করছি। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অবদানের লক্ষে নানান স্বীকৃতি, সনদ ও ভাতা প্রদানের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য নির্ভেজাল মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের ব্যর্থতার কারণে এ নিয়েও বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাই একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে একাত্তরের মতো আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সুতরাং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য আমাদের অবশ্যই যথার্থভাবে অনুধাবন করতে হবে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ, স্মার্ট সোসাইটি, আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন অর্থনীতি-সব মিলিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করা হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।