সম্পাদকীয়

টেকসই সমাধান জরুরি

ডলার সংকট

দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ডলার সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এতেও এ বিষয়ে টেকসই সমাধান মিলছে না। ফলে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ বিষয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, একাধারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবমূল্যায়নের সুযোগে বিশেষ গোষ্ঠী এবং কিছু এক্সচেঞ্জ হাউজ কম দামে কেনা ডলার মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ডলার নিজের কাছে রেখে যত দেরিতে বাজারে ছাড়া হবে, তত রেট পাওয়া যাবে। লক্ষ করা গেছে, প্রবাসীদের একটা অংশও ডলার নিজের কাছে দীর্ঘ সময়ে রেখে দেরিতে দেশে পাঠিয়েছেন। মানুষ যাতে এমন ধারণা থেকে বের হয় আসে, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি দুই দফায় ডলারের দাম কমিয়েছে। এসব পদক্ষেপেও খুব একটা সুফল মিলছে না। এর প্রধান কারণ গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ২৭ শতাংশ কমেছে। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে সীমা বেঁধে দিয়ে ডলারের রেট নির্ধারণের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ‘ক্রলিং পেগ’ হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি ব্যান্ডের (সীমানা) মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য ও হারের ব্যান্ডও ঘন ঘন সমন্বয় করা হয়। এখানে মুদ্রার রেটের একটি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ডলার সংকট কাটাতে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের উপার্জিত অর্থ বৈধ পথে দেশে প্রেরণ করেন, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অর্থ পাচার ও হুন্ডি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি ডলার সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে সংকট নিরসনে যত ভালো পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তাতে টেকসই সমাধান মিলবে কি না সন্দেহ। কর্তৃপক্ষকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসে। তাদের আস্থা ফিরতে দেরি হলে ডলার বাজারের অস্থিরতা দূর করা কঠিন হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button