সম্পাদকীয়

পাটশিল্প প্রসারে গুরুত্ব দিতে হবে

পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের এক সফল ইতিহাস এবং মিশে আছে স্বকীয়তা। পাট চাষ, পাটজাত সামগ্রী তৈরি, পাট ও পাটজাত দ্রব্যাদির ব্যবসা-বাণিজ্য বহুকাল ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৫০-৭০ সময়কালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট ও পাটজাত সামগ্রী পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস ছিল। এ দেশের অর্থনীতিতে বহু বছর ধরে স্বমহিমায় গৌরবান্বিত হয়ে আছে। সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি উভয়ই দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। স্বাধীনতার পর দেশে প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদন হতো। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে পাট উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে পাটজাত পণ্য তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় পাটের বাজার দর নি¤œমুখী হতে থাকে। ৯০ দশকে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতো। বর্তমানে ৭-৮ লাখ হেক্টর জমিতে ৮৪ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। পাটশিল্প প্রসারে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে পাটের গুরুত্ব অপরিসীম। পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য (বস্ত্র, থলে, দড়ি, কাছি, সূক্ষ্ণ বস্ত্র, কার্পেট ইত্যাদি) আমরা প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকি। এ দেশের পাট থেকে তৈরি ‘জুটন’ বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। আমাদের পাটকলের তৈরি কার্পেট পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এখনো বিশেষভাবে সমাদৃত। এ ছাড়া পাটের তৈরি ঝুড়ি, শিকে এবং কারুকাজশোভিত অন্যান্য দ্রব্য বিদেশিদের দৃষ্টি কাড়ছে। এগুলো রপ্তানি করে বাংলাদেশ এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আমাদের ধুঁকে ধুঁকে চলা পাটকলগুলো পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠবে। যেসব সরকারি-বেসরকারি পাটকল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো চালু হওয়ার সুযোগ পাবে। দেশে ও বিদেশে পাটের বাজার বাড়াতে পাটজাত পণ্যের প্রদর্শনী, মেলা ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। যত প্রশিক্ষণ, তত দক্ষ জনবল তৈরি হবে। আর দরকার জনসচেতনতা। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পলিথিন বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পণ্যের বদলে পাটজাত পণ্যের ব্যবহারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাটশিল্পের প্রসারে সরকারকে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button