সম্পাদকীয়

চিকিৎসা সেবায় অরাজকতা, যেন দেখার কেউ নেই

আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়ম এবং ভুল চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই এ ধরনের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। দেশের চিকিৎসা সেবা অউন্নত হওয়ায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কত মানুষ চিকিৎসার জন্য যায়, তার সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে সংখ্যাটি যে কয়েক লাখ হবে তাতে সন্দেহ নেই। এ বিপুল সংখ্যক মানুষ অর্থ ও শ্রম খরচ করে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করছে। কারণ একটাই, সেখানে গেলে ভাল স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে। রোগীর যত বড় লাইন হোক না কেন, একজন রোগীকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ ও দেখার জন্য যতক্ষণ সময় লাগবে, ততক্ষণই সেখানের চিকিৎসকরা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে এ ধরনের চিকিৎসা খুব কম বলেই এসব মানুষ ভারতে ছুটে যায়। যাদের বেশি টাকা-পয়সা আছে, তারা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যান। তবে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের হাসপাতালগুলোর উপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশে রোগীর আস্থা জন্মেছে।
রাজধানীর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, শত শত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল। রাজপথ থেকে শুরু করে অলিতে-গলিতে। এত এত চিকিৎসা কেন্দ্র, তারপরও মানুষ কষ্ট করে বিদেশ চলে যাচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, এগুলোর সিংহভাগই চিকিৎসার নামে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে চিকিৎসা গৌণ, ব্যবসা মুখ্য। সরকারি হাসপাতালগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। নানা ঝক্কি-ঝামেলার পরও প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এসব হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ সুযোগে বেসরকারিভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে-সেখানে চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এক শ্রেণীর চিকিৎসক মানুষের অসুস্থতার দুর্বলতম সময়ের সুযোগ নিয়ে যা খুশি তা করে যাচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে যথাযথভাবে রোগও নির্নয় করতে পারছে না।
আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা কবে উন্নত হবে। মূলত চিকিৎসা বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় যে অরাজকতা চলছে, তা দেখার যেন কেউ নেই। সরকারেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার উচিত বেসরকারি কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মান কী অবস্থায় রয়েছে, তা মনিটর করা। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা রয়েছে। কোন চিকিৎসায় কত খরচ হতে পারে তা বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে একটি মূল্যতালিকা প্রস্তুত করে দিতে পারলে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর বাণিজ্যিকীকরণ অনেখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসা সেবায় যারা নিয়োজিত তাদের বিবেক এবং মানবিক বিষয়টি বড় করে তোলা। এ দায়িত্ব মানুষ হিসেবে তাদের নিজেদেরই পালন করতে হবে। মানুষের অসহায় সময়ের সুযোগ নেয়া কোনোভাবেই বাঞ্চনীয় হতে পারে না। অন্যদিকে সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত চিকিৎসা সেবামূল্য সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখা। এ বিড়ম্বনার ইতি ঘটানো জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button