প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন

অনলাইনে হয়রানি বাড়ছে
দেশে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে অনলাইনে হয়রানি। আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৩৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। যেখানে পুরুষ ব্যবহারকারী ৪৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, আর নারী ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ডিজিটাল বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারী উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্য ও সেবা নিয়ে অনলাইনে হাজির থাকছেন, আর এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনে যেমন নারীর ভূমিকা বাড়ছে, তেমনি অনলাইনে নারীদের প্রতি হয়রানি ও সহিংসতার ঝুঁকিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, বৈষম্য, সহিংসতা ও হয়রানির সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছেন নারী। তবে ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে বেশির ভাগ নারীর নূন্যতম জ্ঞান না থাকার কারণে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য হয়রানির স্বীকার বাড়ছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, শতকরা ৬৪ জন নারীই জীবনের কোনো না কোনো সময় অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আবার যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী। এ ছাড়া ইনবক্সে অশ্লীল ছবি বা অনৈতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারীকে; পাশাপাশি সাইবার স্টকিংয়ের শিকার হয়েছেন ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নারী। এভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা উপায়ে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা। এ যেন দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার চিত্র থেকে একদম আলাদা কোনো প্রেক্ষাপট। প্রতি পাঁচজনে একজন নারী এ হয়রানি থেকে বাঁচতে নিজেকে গুটিয়ে নেন, অনেকে মানসিক সমস্যায় ভোগেন, আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নারীর জন্য অনিরাপদ জায়গায় পরিণত হচ্ছে। আর এর ফলাফলও সুদূরপ্রসারী, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হলে সমাজ, অর্থনীতি, ডিজিটাল অগ্রযাত্রাসহ দেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে অনলাইনে অনিরাপদ রেখে অগ্রগতির কোনো লক্ষ্য পূরণ করাই সম্ভব নয়। এ কারণেই আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোয় নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবে নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করতে হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এর ব্যবহারকারী দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল সাক্ষরতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। সব ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও এর ব্যবহারকারী, মিডিয়া, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমাদের পক্ষে নারীর জন্য নিরাপদ ডিজিটাল স্পেস তৈরি করা সম্ভব হবে। পিছিয়ে যাওয়ার সময় আর নেই, তাই ভয়ভীতি কাটিয়ে নারীর সফল পদচারণ অনলাইনেও নিশ্চিত করতে হবে।