ভরাট হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদী

খুব ছোটবেলায় নদীর সঙ্গে আমার সম্পর্কটি ছিল কেবলই শারীরিক। সময়-অসময় নেই, যে কোনো সময় ঝাঁপিয়ে পড়তাম নদীর বুকে। গত ৫০ বছরে প্রায় অর্ধেক নদী শুকিয়ে মরে গেছে। যে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঢাকা শহর। যুগ যুগ বছরের বেশি সময় দরে যে নদীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ হয়ে আসছে। সেই বুড়িগঙ্গা নদীই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরের চারপাশে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা এ চারটি নদ। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক স্রােতে মিশে বুড়িগঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছিল। যা ধলেশ্বরী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হতো। বুড়িগঙ্গা নদীতে একসময় জোয়ার ভাঁটা হতে দেখা যেত কিন্তু এখন আর সেই বুড়িগঙ্গা নদীতে জোয়ার ভাঁটা হতে বেশি দেখা যায় না। একটা সময়ে বুড়িগঙ্গা নদীটির গড় গভীরতা ও প্রশস্ততা ছিল যথাক্রমে ১০ মিটার ও ৪০০ মিটার এবং মোট দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। বর্তমানে নদীটির গড় গভীরতা ও প্রশস্ততা দুইটাই কমে গেছে। বর্জ্যে নদীর তলদেশে ১০ ফুট ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীতে ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, শিল্পকারখানা ও নৌযানের বর্জ্যে পানি দূষণের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যার ফলে এই নদীতে মাছ থাকতে পারছে না। হারিয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা থেকে জলজ প্রাণী ও মাছ। মানুষ এখন আর ব্যবহার করতে পারছে না এই বুড়িগঙ্গার জল। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, ইসলামবাগ, পোস্তা, লালবাগসহ নদীর পার এলাকায় অবস্থিত কয়েক শ পলিথিন ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা, পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের দুই শতাধিক ড্রাইং কারখানাসহ হাজারেরও বেশি কারখানা এবং শ্যামপুর, পাগলা-ফতুল্লা এলাকায় শত শত কারখানা থেকে কেমিক্যালমিশ্রিত পানি নদীতে মিশে দূষিত হচ্ছে। এর ফলে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে বসবাসকারীদের দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চর্মবাহিত রোগ। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মাত্রা অতিক্রম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে চলতে থাকলে সামনে অনেক বড় বিপদ আছে। এখন সরকারের উচিত ঢাকার অন্য নদীগুলোর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার সংযোগ সারা বছর নাব্য রাখার। বুড়িগঙ্গা নদীকে খনন করে নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে। নদীতীর দখলমুক্ত করে জনসাধারণের জন্য হাঁটা-চলার রাস্তা তৈরির সঙ্গে লাগানো যায় দেশীয় প্রজাতির গাছ। সরকারের সদিচ্ছা ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে দীর্ঘমেয়াদী বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। দিন দিন ইট-পাথরের জঙ্গল হয়ে ওঠা ঢাকাকে সুন্দর ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বুড়িগঙ্গার হারানো রূপ পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই।