সম্পাদকীয়

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করুন

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের দাম

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, তাতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে মহানগরে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগণের যাপিত জীবন চলছে নিদারুণ কষ্টে। তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়। সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠছে। বাসাভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, পানির সংকট, যানবাহণের যাতায়াত খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে নিম্নবিত্তদের অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নয়নের জোয়ার বইছে চারদিকে। এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে, যদি মানুষ দু’বেলা দুমুঠো খেতেই না পারে। এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সকল জনসাধারণের মনে। যে দেশের মানুষ মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হিমশিম খান, সেখানে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে একসময় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ যথাযথ খাবার ক্রয় করতে পারবে না। এখনই অনেকে পারছেন না।
অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বছরের ব্যবধানে প্রায় সব পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ সক্রিয় থাকলেও কার্যকর অর্থে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছরই ক্রেতাকে জিম্মি করে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। এমন খবরও দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিও কারণে অনেকে তাদের সন্তানদের লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে সন্তানদেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আবার খাবারের দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ থেকেও তারা পিছিয়ে থাকছে। এইভাবে মূল্যস্ফীতি গোটা দেশকে একটা বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে সরকারের উচিত বাজার তদারকি বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি মানুষের আয়-রোজগার যাতে বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করা। এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো অজুহাতের কথা বলে দাম বাড়িয়ে দেন। আবার পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে কিংবা বাড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে শাকসবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একথা সঠিক নয়। কেননা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে আমরা দেখছি বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। তাই অনৈতিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে দুদক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার অনুসন্ধান বাড়াতে হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশে ভোক্তার অধিকার সর্বোত্তম রূপে সংরক্ষিত হোক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button