সম্পাদকীয়

তীব্র শীতে ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী

সারা দেশে দিনে-রাতে তাপমাত্রা কমা-বাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতি, গাছের ঝরা পাতা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সবকিছুই জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ হলেও বছরের শেষের দিকে এদেশে শীতের প্রকোপটা নেহাতই কম নয়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত হাড় কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং হ্রাস ঘটে। তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে তখনই শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। শীত আসতেই দেখা দেয় শীতজনিত নানা রোগ। যার বেশিরভাগ শিকার হয়ে থাকে বয়স্ক লোকজন এবং শিশুরা। ঠান্ডা থেকে সাধারণ জ¦র-সর্দি-কাশি ছাপিয়ে বাড়তে থাকে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের রোগ। শীতে হৃদরোগীদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। হৃদরোগীর ক্ষেত্রে বেশি ঠান্ডা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মৌসুমি রোগের ভোগান্তি। শীতের সময় অন্য রোগের তুলনায় বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। কারণ হিসেবে দেখা যায় শিশু ও বৃদ্ধদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে সব থেকে কম। বিশেষ করে এই রোগ থেকে সর্তক না থাকলে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের সংক্রমণজনিত একটি ব্যাধি। এই রোগে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে বুকে পানি জমতে পারে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিউমোনিয়া রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। এ ছাড়া, ছত্রাকঘটিত কারণেও অনেক সময় নিউমোনিয়া হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, শীতের এ সময়টাতে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো নিউমোনিয়া। সময়মতো এর চিকিৎসা না নিলে এই রোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা কমে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় ডায়রিয়ার প্রকোপ। শীত এলে শীতজনিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হবে, এমন ঝুঁকি থেকেই যায়। কাজেই এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্কতা প্রচার করতে হবে। শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবকদের অধিকতর সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরতে হবে। শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সে জন্য বিশেষ করে মায়েদের সচেতন থাকতে হবে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালগুলোকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। সর্বশেষে শীতের এই মৌসুমে সবাই যদি একটু সর্তক থাকা যায় তাহলেই অনেক মানুষ এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে বলে আশা করা যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button