বাড়ছে ই-বর্জ্য, নিতে হবে যথাযথ ব্যবস্থাপনা

প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে বাস করছি আমরা। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদনের মাধ্যম তথা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমাদের নিত্যব্যবহারের সঙ্গী। বর্তমান সময়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে কোনো ইকেলট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করেনি। ইলেকট্রনিক যন্ত্র আমাদের আধুনিক জীবনের অংশ হয়ে গছে। তবে এ ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নষ্ট বা বিকল হয়ে যাওয়ার পর যথাযথভাবে রিসাইকেল না করা হলে তা হয়ে ওঠে ই-বর্জ্য যা কিনা আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিস যেমন স্মার্টফোন, টিভি, ফ্রিজ, ইস্ত্রি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে বর্জ্যে পরিণত হয়। প্রতি বছর এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ বাড়ছে আর তার সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর কম্পিউটার আমদানি করা হয় ৫০ হাজারের মতো। আর বছরে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য, যার মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইসেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ লাখ টন ই-বর্জ্য। পাশাপাশি প্রতিবছর দেশে ৩০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য বাড়ছে। এই ই-বর্জ্যর কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। মানুষের শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিল প্রাণঘাতী রোগের। বিশেষ করে এর প্রভাবে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মের হার বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি দেখা যায় কোন ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহার করে নষ্ট হলে তা যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। এই যত্রতত্র ই-বর্জ্য ফেলার কারণে এতে থাকা সিসা, মার্কারি, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও বেরোলিয়ামসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া এসব ক্ষতিকর উপাদান সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ঝুঁকি বাড়ে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার। আবার ই-বর্জ্যরে মধ্যে থাকা স্বর্ণ বা রুপার মতো দামি ধাতু আলাদা করার সময় ডিসোল্ডারিং পদ্ধতি কাজে লাগানো হয় কিংবা ব্যবহার করা হয় অ্যাসিডসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এসব কাজের সময় সতর্ক না থাকলেও বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হতে পারে। এতে সৃষ্টি হয় ফুসফুসের নানা রোগ। তাই এখনি সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। বিদেশ থেকে ব্যবহৃত পুরাতন কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল আমদানি বন্ধ করতে হবে। এসব আমদানিকারকদের আনতে হবে শাস্তির আওতায়। পাশাপাশি ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য সূচিতে ই-বর্জ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে দক্ষ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ই-বর্জ্য পুনরায় কাজে লাগানোর জন্য গড়ে তুলতে হবে গবেষণাগার। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।