খাবারে ভেজাল, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

মানুষের মৌলিক চাহিদার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে থাকে। ‘ভেজাল’ একটি নেতিবাচক শব্দ। যার অর্থ মিশ্রিত, মেকি বা খাঁটি নয় এমন। উৎকৃষ্ট দ্রব্যের সঙ্গে নিকৃষ্ট দ্রব্যের মিশ্রণকে ভেজাল বলে। অন্য কথায় খাদ্যের পরিমাণ, স্থায়িত্ব অথবা স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কাঁচা বা প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীতে এক বা একাধিক ভিন্ন পদার্থ সংযোজন করাকে বোঝায় ভেজাল। খাবারে ভেজাল মেশানো মারাত্মক অপরাধ, আইনত দ-নীয়। কিন্তু তারপরও দেখা যায়, দেশে বিশুদ্ধ খাবার খুঁজে পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো বাংলাদেশের জন্য একটি প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে ৫ বছরের কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশুর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে ১ লাখ ২৫ হাজার। দেখা যায়, সব ক্ষেত্রেই এই ভেজালের ছড়াছড়ি, শাকসবজি কপার সালফেট পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয় টাটকা ও তাজা দেখানোর জন্য। মৌসুমি ফল আম, লিচু ও জামে দেওয়া হয় কারবাইড ও ফরমালিন। ফল গাছে থাকতেই ছিটানো হয় হরমোন ও কীটনাশক। সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজের ভেতরে দেওয়া হয় তরল পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট। এর ফলে তরমুজের ভেতর থাকে লাল টকটকে। ক্যালসিয়াম কারবাইড দিয়ে পাকানো হয় কলা। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের জন্য মাছে দেওয়া হয় ফরমালিন। ভেজালমুক্ত খাদ্য যেমন দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধান এবং রোগ প্রতিরোধ করে,তেমনি ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে। হয়। ভেজালযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে ভুগছে, সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে রয়েছে অগণিত শিশু। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন এবং ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন-২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। এই আইনে বাজারে অনিরাপদ বা ভেজাল খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করলে অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের যথার্থ প্রয়োগের অভাবে বাজারে কমছেনা ভেজাল পণ্যের সংখ্যা। ভেজাল খাবার নীরবে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশ-জাতিকে। তাই ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। খাদ্যে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য আইনের সঠিক প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা ও ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা পরিহার করাও আবশ্যক। দেশে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে প্রভাবশালী কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে প্রয়োজন জনগণ কর্তৃক সচেতন ও সোচ্চার হওয়া।