সম্পাদকীয়

নিপাহ ভাইরাস: পরিহার করুন খেজুরের রস

শীত এলে কে না ভালোবাসে ভোর সকালে খেজুরের রস খেতে। কিন্তু এই খেজুরের রস খাওয়াই অনেক মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যার প্রধান কারণ এই নিপাহ ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাস অতি সহজেই বাদুড়জাতীয় প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। শুধু বাদুড় নয়, নিপাহ শূকরের বর্জ্য থেকেও ছড়াতে পারে। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ গ্রামে প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে ঐ গ্রামের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় নিপাহ ভাইরাস। বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০০১ সালে মেহেরপুরে। ঐ বছর শনাক্ত হয় ১৩ জন এবং অনেকেই মারা যায়। ২০০৪ সালে দেশে খেজুরের রস খেয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং মারা গেছে ৫০ জন। ২০১২ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয় ১৮ জন। সর্বশেষ গত সাত বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু ২০১৭ সালে তিন জন, ২০১৮ সালে চার জন, ২০১৯ সালে আট জন, ২০২০ সালে সাত জন, ২০২১ সালে দুই জন এবং ২০২২ সালে তিন জন শনাক্ত হয়। গত ২৩ বছরে দেশে ৩৩৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২৪০ জন মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি ৭১ জন শনাক্ত হয় ফরিদপুরে। এরপর রয়েছে রাজবাড়ীতে ৩৫, নওগাঁয় ৩২, লালমনিরহাটে ২৪, মানিকগঞ্জে ১৭, রংপুরে ১৬, মেহেরপুরে ১৩ জন। দেশের ৩৪টি জেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। শুধু খেজুরের রস নয়, বাদুড়ের মুখের লালা বা বাদুড়ের মলমূত্র দ্বারা দূষিত তালের রস বা তাড়ি ও আংশিক খাওয়া ফল মানুষ খেলেও নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, আক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো কোনো টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ৭৭ শতাংশ। কেউ বেঁচে গেলেও বৈকল্যসহ নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাকে। এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যেতে রস খাওয়ার আট থেকে ৯ দিন সময় লাগে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ৬-১১ দিন পরে প্রদর্শিত হয়। এই ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে, ভাইরাসটি ছোঁয়াচে, খুব দ্রুত ছড়ায় এবং আক্রান্তদের প্রায় সবাই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগটি বিশ্বে মহামারি সৃষ্টি করতে পারে। এক মাত্র খেজুরের কাঁচা রস সংগ্রহ, বিক্রয় ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাছীগণকে এবং জনসাধারণকে প্রাণিবাহিত সংক্রামক ব্যাধি রোগ নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করা হলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমতাবস্থায় যেহেতু বাদুড়ই এ ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম, তাই বাদুড় থেকে মানুষকে দূরে থাকার ব্যাপারে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। যেসব এলাকার মানুষ নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় সেসব এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করতে হবে। শীত মৌসুম এলেই নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে। আর তাহলেই আমারা আরেকটা বৈশ্বিক মহামারী থেকে রক্ষা পাবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button