নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘাত বাড়ছে
১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবার পর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রচার শুরু হবার পর থেকে গত ছ’ দিনে গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৬ টি জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মাদারীপুরে গত ২৩ ডিসেম্বর একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জে এক কর্মীর বাড়িতে গিয়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার শিবির ও মিছিলে হামলা, কর্মীদের মারধর ও হুমকির দেওয়ার অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অপহরনের অভিযোগ উঠেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ২৬৪ টি আসনে। এর মধ্যে শতাধিক আসনে দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৬ টি এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ছ’ টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এসব আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা সংঘাত ঘটিয়ে প্রচারণায় বিঘœ ঘটাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলে শুধু মাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও সংঘর্ষ হামলা বন্ধ হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন। এবার নাকি প্রার্থীতা বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন ও বর্তমান সরকারকে অসহযোগীতার আহবান জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের অভিযানে প- হবার পর ২৯ অক্টোবর থেকে দলটি চার দফা হরতাল ও ১৩ দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচি চলাকালে বাস ট্রাকে অগ্নিসংযোগ সহ ট্রেনেও আগুন দেওয়া হয়েছে। রেল লাইন তুলে দুর্ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটেছে। ট্রেনের আগুনে মা ও শিশু সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যু সারা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নির্বাচনী প্রচরণা ও বিএনপির অবরোধে প্রাণহানির ঘটনায় সারা দেশবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে রাজনীতি দেশ ও মানুষের কল্যাণে-হবার কথা সেই রাজনীতি যখন প্রাণহানি ঘটায় তখন সেই রাজনীতির প্রতি জনগণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। দু:খ জনক হলেও সত্য স্বাধীনতার অর্ধশতকের চেয়ে বেশি সময় অতিক্রম হলেও আমরা টেকসই সর্বজন গ্রাহ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। দেশের মধ্যে অনেক মেগা প্রকল্প গড়ে উঠলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। বরং ঋণখেলাপী ও বিদেশে টাকা পাঁচার করার খারাপ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে বাজারে নিত্য পণ্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধি দেশের মানুষের জীবন যাত্রায় বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন উৎসবের হলেও এখন ভয়ের হয়ে উঠেছে। ফলে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোট কেন্দ্রে যাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হাতে নির্বাচনী সংঘাতগুলো বন্ধ করতে হবে, সেই সাথে বিএনপির আন্দোলনে নজরদারি বাড়িয়ে জনজীবনে নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। শান্তিপূর্ণ জীবন চাই।