নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে হবে

চর্যাপদের আমল থেকেই আমাদের দেশের নদনদীগুলোর প্রবহমানতা নিয়ে একের পর এক শব্দগাথা রচনা করতেন কবিরা। তবে অতীতের সেসব কাব্য আর গাথা এখন দীর্ঘশ্বাসে রূপ নেয় শুষ্ক মৌসুম এলে। বস্তুত সারা দেশের নদীগুলোর তীরের বিস্তীর্ণ এলাকাই বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সারা দেশে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও লক্ষ করা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও শুরু হয় দখলের প্রতিযোগিতা। নদী রক্ষায় আমাদের দেশে অনেক আইন থাকার পরেও কিছু প্রভাবশালীরা এসব আইন, নির্দেশনা-কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। যে যেভাবে পারছে নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা বানাচ্ছে, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের বানাচ্ছে, বাঁধ দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইটভাটার মালপত্র পরিবহন বা অন্য কোনো কারণে রাস্তা বানাচ্ছে। বর্তমানে নদী দখলের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখলের কারণে নদ-নদীগুলো ক্রমেই নাব্য হারাচ্ছে। চর পড়ে অনেক নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে, তেমনি হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরপরেও এসব প্রশাসন যেন দেখেও না দেখার ভান করে। ফলে দখলকারীরা আরো বেপরোয়া হয় ও নদীর পানিপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শুষ্ক মৌসুমে বহু কৃষক সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে বর্ষায় জলাবদ্ধতাসহ মানুষ নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নদী নিয়ে যে সমস্যাগুলো আছে, তা সমাধানে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। একসময় যে নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত, তা এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই নদীগুলো অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে। অথচ তারপরেও প্রশাসন আজ পর্যন্ত নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসন যদি নদী রক্ষায় এমন উদাসীন থাকে, তাহলে এত আইন, উচ্চ আদালতের এত নির্দেশনা কোনো কাজে আসবে না। তাই আমরা আশা করবো, এই অবৈধ কাজের জন্য পুলিশ ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নদী বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে, অর্থনীতির গতিপ্রবাহ সচল থাকবে।
