সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা বাড়ছে

দেশে সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্নভাবে আহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় এবং তাদের একটি বড় অংশ মারা যায়। তাদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও রাস্তার সংখ্যাসহ সামগ্রিক যোগাযোগবিষয়ক কর্মকা- যত বৃদ্ধি পাবে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা ততই বাড়বে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জরুরি চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের অধিকাংশই তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা পায় না। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় পথ দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজার রকম ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চিকিৎসা শুরু না করে মোটা টাকা দাবি করেছে এমন উদাহরণও হয়েছে। অনেক সময় আবার বাড়ির লোককে খবরও দেওয়া হয় না। অনেক সময় কেউ পথ দুর্ঘটনায় আহত হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান না পথ চলতি মানুষজন। পুলিশ-হাসপাতালের ঝামেলা এড়াতেই আহত ব্যক্তিকে পাশ কাটিয়ে চলে যান। দুর্ঘটনার পর দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময়কে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়। প্রথম দুই থেকে তিন ঘণ্টাতেই চিকিৎসা পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি আহতের ক্ষেত্রে। তাহলে অনেকাংশে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। কারণ আহতদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় অধিকাংশ রোগী যথাসময়ে সেবা নিতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে বছরে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে। আহত ব্যক্তিদের সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া গেলে মৃত্যুহার কমে আসবে এবং তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে। যদিও দেশে সড়ক-মহাসড়কের পাশে ২১টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন এর ১৬টিতেই কোনো কার্যক্রম নেই। দুটির নির্মাণকাজ চলছে। দুটিতে শুধু বহির্বিভাগ চালু আছে। একটি সংশ্লিষ্ট জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগ হিসাবে চালু রয়েছে। বস্তুত পরিকল্পনায় দুর্বলতার কারণে ট্রমা সেন্টারগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশের সড়ক-মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত ট্রমা সেন্টারগুলোতে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এর বাইরেও সব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী টিম প্রস্তুত রাখা দরকার। এ টিমে সদস্য হিসাবে বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দেশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, প্রশমন ও প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯-এর ব্যবহারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল, উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্য দপ্তর আহতের চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।