রাস্তার খোলা খাবারে ভয়াবহ পরিণতি
বিশ্বের প্রধান শহরগুলির মতো, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রাস্তা এবং ফুটপাতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে অসংখ্য খাবারের দোকান। এসব দোকানের খাবারকে সাধারণত স্ট্রিট ফুড বলা হয়। রাস্তার খাবার জনপ্রিয় কারণ এটি সস্তা এবং সুস্বাদু। রাজধানী ঢাকার অর্ধকোটি মানুষ প্রতিদিন এসব খাবার খায়। উন্নত দেশগুলিতে রাস্তার খাবার স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু এবং আকর্ষণীয় হলেও এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে। যদিও এই রাস্তার খাবারগুলো খেতে সুস্বাদু বা সুস্বাদু, তবে এগুলো অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় তৈরি এবং পরিবেশন করা হয় বিধায় এগুলো বিভিন্ন গুরুতর অসুস্থতার দিকে পরিচালিত করে নগরবাসীকে। পুরনো বাসি তেল, রং করার রাসায়নিক, নষ্ট শাকসবজি, পোকাযুক্ত আটা এবং বিভিন্ন নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরি করা হয়। এই জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, আলসার, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। রাস্তার খাবার প্রাচীন গ্রীসে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ভাজা মাছ বিক্রি করা ছিল স্ট্রীট ফুডের শিল্পের প্রথম ধাপ। প্রাচীন রোমে সেই সব নাগরিকরা যারা ভাড়া বাসায় থাকত এবং যাদের ঘরে উনুন বা চুলা ছিল না, তাদের হাত ধরেই স্ট্রীট ফুডের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ক্রমবর্ধমান এই রাস্তার খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে প্রধান সমস্যা হল এগুলো ভ্রাম্যমান। ফলে হোল্ডিং নম্বর না থাকায় তাদের ট্রেড লাইসেন্স দেয়াও সম্ভব হয়ে থাকেনা। রাস্তার খাবার অনিরাপদ হওয়ার প্রধান কারণ বিক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলেই দেখা যায় এই খাবারগুলো অনেকাংশে নিরাপদ হয়ে যায়। রাস্তার খাবারের নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থার বিশেষ প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেন খাবারগুলোতে জীবাণু থাকছে, এর প্রকৃত কারণগুলো অনুসন্ধান করে এবং সে লক্ষ্যে প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খাবার বিক্রেতাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে খাবার গ্রহণে আমাদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। ভাজা-পোড়া, তেল ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করে শাকসবজি, ফলমূল ও ঘরে তৈরি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার জন্য হলেও এই ধরনের খাবার ত্যাগ করতে হবে।