অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

নির্বাচনি আচরণবিধি
আর কয়েকদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা তেমন একটা চোখে পড়ছে না। বরং তাদের নিঃস্পৃহতায় অনেক প্রার্থী ও কর্মী ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। নির্বাচনে ব্যাপকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলেও জানা যায়, ৩০০ আসনে প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও কম আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে পাঠানো গত কয়েক দিনের প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থীদের জরিমানা করা হয় দৈনিক কমবেশি ৩০টি। অথচ আচরণবিধি প্রতিপালনে ৩০০ আসনে ৭৫৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়ীদের তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেটরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির ইসিতে পাঠানো প্রতিবেদনেও দৃশ্যমান কঠোর ব্যবস্থার সুপারিশ থাকছে না। যদিও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়া, প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীকে হুমকি-ধমকি, মারধর করাসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ ইসিতে আসছে। জানা যায়, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ইতোমধ্যে ৩ শতাধিক শোকজ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ২০১টির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কমিশন মাত্র ৫৭টি প্রতিবেদনের ওপর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এতে কয়েকজন প্রার্থী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। বাকিদের সতর্ক করেই দায় সারা হয়েছে। কয়েকটি ঘটনায় নাকি আচরণবিধি লঙ্ঘনের সত্যতাই মেলেনি। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছেন, এ নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে না। যদিও আমরা দেখছি অনেক স্থানে পোস্টার ছেঁড়া, পালটাপালটি ধাওয়া, বিপক্ষ প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্প অফিসে আগুন, রাস্তার ওপর নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন, এলাকাবাসীকে হুমকি-ধমকি প্রদর্শনের নানা ঘটনা; এমনকি কোনো কোনো প্রার্থী তাদের কর্মীদের পক্ষ নিয়ে পুলিশকে প্রকাশ্যে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। আরও দুঃখজনক, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের কিছুসংখ্যক কর্তা ও চিকিৎসক তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ ও প্রচার চালাচ্ছেন। ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ অনুযায়ী তা চাকরিবিধি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হলেও উলটো তারা এর পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে শুধু কঠোর বক্তব্য দিলেই হবে না, কাজেও তার প্রমাণ করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সতর্ক করা ছাড়াও প্রার্থীকে জরিমানা করা, এমনকি প্রার্থিতা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও যে ইসির রয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনের সিদ্ধান্ত যাতে প্রার্থীরা মেনে চলেন, সে ব্যাপারেও ইসিকেই উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের মতে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শুধু নোটিশ প্রদানই যথেষ্ট নয়, বরং প্রমাণসাপেক্ষে বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য। এতে ইসির প্রতি ভোটারদের আস্থাই শুধু যে বাড়বে তা নয়, কমিশন কঠোর হলে প্রার্থীরাও আইন মেনে চলতে বাধ্য হবেন।