সহযোগ বনাম অসহযোগ

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো হরতাল, গণসংযোগ ও অসহযোগ আন্দোলন করছে। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছে। অবরোধের কারণে বাস, ট্রাক ও ট্রেনে আগুন জ¦লছে; পুড়ে মরছে মানুষ। অন্যদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘাতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। চলছে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের হাত পা ভেঙ্গে দেওয়, নির্দিষ্ট প্রতিকে ভোট না দিলে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ধামকি চলছে। নির্বাচন কমিশন মুখে তদন্তের কথা বললেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। আচরণ বিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখা জন্য ভোটের মাঠে কাজ করছে কম বেশি ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। এ ছাড়া প্রতিটি আসনে জুটিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে আছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এ কমিটি কোন অভিযোগ তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দেবে। এর ভিত্তিতে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় দু’ একটি ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সতর্ক করা হচ্ছে। নির্বচনী আচরণবিধি অনুসারে, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কারও উস্কানিমুলক বক্তব্য দেওয়া অপরাধ। এধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ছ’ মাসের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া গন-প্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, কোনো বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায় গোষ্ঠী; বর্ন উপদল বা উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে কোনো ভোটারকে ভোট দিতে বা না দিতে যদি কোনো প্রার্থী আহবান জানান বা প্রয়োচিত করে তবে তা অপরাধ, এ অপরাধ দুর্নীতির অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাজা দু’ বছর থেকে সাত বছর সশ্রম কারাদ- ও অর্থদ-। নির্বাচন কমিশন মুখে অনেক বড় বড় কথা বললেও কার্যত তা কাজে দেখা যাচ্ছে না। কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া কঠিন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারণা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে বিএনপির অবরোধে যানবাহনে আগুনের ঘটনাও দেশবাসীকে আতঙ্ক গ্রস্থ করে তুলেছে। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা অসহযোগ আন্দোলন করছেন এবং যারা নির্বাচনের পক্ষে সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন উভয় পক্ষের আচরণে সাধারণ জনগণ ক্ষুদ্ধ। আর এ ক্ষুদ্ধতা তারা কি ভাবে প্রকাশ করবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এর মধ্যে শান্তিপ্রিয় জনগণ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা প্রকাশ করা শুরু করেছেন। সরকার পরিবর্তনের সর্বজনগ্রাহ্য ভোট ব্যবস্থা কিন্তু সেই ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে মানুষের মাঝে আশঙ্কা নি:সন্দেহে ভাবনার বিষয়। এখন দেখার ব্যাপার ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটের মাঠে ভোটাররা কতটা তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেন? আর বিএনপি সহ সমমনা দলগুলো কতটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিতে পারেন? আমরা চাই সবার সহবস্থানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোট ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হোক। মানুষকে মেরে হুমকি ধামকি দিয়ে রাজনীতি হয় না। আদর্শ দিয়ে মানুষের মনজয় করতে হয়।