সম্পাদকীয়

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

আমাদের দেশের বিত্তশালী শ্রেণির মানুষ কোটি কোটি টাকা এদেশে বিনিয়োগ না করে সন্তানদের উচ্চশিক্ষা, বাড়িঘর ক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগ করছে পুঁজিবাদী দেশে। শুধু আমেরিকায় নয়, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করছে। শিক্ষিত শ্রেণিটিই নিজেদের আরাম-আয়েশ, নিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে দেশের সম্পদ পাচার করছে। ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশ পাওয়া তথ্য থেকে যানা যায়, সংসদ নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন প্রার্থীরা তাদের সম্পদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে আমজনতার অবস্থা ভিরমি খাওয়ার মতো। এমনিতেই আমাদের জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের সংসদ বলে পরিচিতি লাভ করেছে ১৯৯১ সালের পর থেকে। এখন তাদের মধ্যে শত কোটি এবং হাজার কোটি টাকার মালিক কতজন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের সরকার যে খুব একটা মনোযোগী নয়। অর্থ পাচার রোধে সরকার যদি খুব শক্ত অবস্থান নেয়, তাহলে কিন্তু অর্থ পাচার অপরাধ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হতে পারে না। অর্থ পাচারকারীদের ব্যাপারে হাইকোর্টে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার নির্দেশ থাকার পরও এ ব্যাপারে দুদক ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার ব্যর্থতা আমাদেরকে ভীষণভাবে হতাশ করেছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচারকারীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের গুরুতর ঘাটতি আছে। এ থেকে ধারণা করা যায়, অর্থ পাচারকারীরা প্রভাবশালী, তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নিতে চায় না। যেখানে কঠোর হওয়া দরকার, সেখানে কঠোর হচ্ছে না। ইতঃপূর্বে যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁদের তো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। যাঁরা চিহ্নিত অর্থ পাচার অপরাধে জড়িত, তাঁদের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে তো অন্যরা এ ধরনের অপরাধ করতে ভয় পাবেন না। সেটাই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে। এই প্রসিকিউশনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই তো অর্থ পাচারকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমাদের রাষ্ট্রকে এই দুর্বলতা স্বীকার করে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা চাই বিদেশে পাচারকারী তা সে যেই হোক তার মুখোশ উন্মোচন হোক। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও প্রত্যাশিত। আমাদের দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে, সেটি যদি সংশোধিত না হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর নানা কুপ্রভাব পড়বে। তাই এজন্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ ও আর্থিক অনিয়ম রোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এতে অর্থ পাচার অনেকখানি কমে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button