গণপরিবহনে নরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

বর্তমানে বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি বাড়ির বাইরে হয়রানিও নারীদের জন্য এখন একটি বড় সমস্যা। এদেশের ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ নারীকে প্রতিদিন ঘরের বাইরে কাজে যেতে হয়। তাদের অধিকাংশই গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকে। এই ২৭ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে, প্রায় ৯৪ শতাংশ মহিলা জনসমক্ষে কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বাসে উঠতে না পারা, নির্দিষ্ট স্থানে না থামা, আসনের অভাবে নারীদের বসতে না দেওয়া, সংরক্ষিত আসনের অপ্রতুল এবং বাসে ওঠার সময় প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় দেশের নারীদের। এমতাবস্থায়, গণপরিবহনে নারীদের হয়রানি বন্ধ করতে নগর ও পরিবহন পরিকল্পনায় নারীদের অংশগ্রহণের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ ও আচরণের পরিবর্তন করা খুবই জরুরী হয়ে পরেছে। গণপরিবহন হল পুরুষ, মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ সহ সমাজের সকল সদস্যের পরিবহনের মাধ্যম। তবে এই গণপরিবহন ব্যবস্থায়ই নারীরা সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে থাকে। এ অবস্থায় নারীদের যাতায়াত সমস্যা সমাধানে বাসে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হতে হবে। নারীদেরও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গণপরিবহনে নারীদের দুর্ভোগ কমাতে পুরুষদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে নারীদের স্বচ্ছন্দে চলাচলের সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নারীদের উত্ত্যক্ত না করা এবং নারীদের কেউ উত্ত্যক্ত করা থেকে উত্যক্তকারীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। ভ্রমণের সময় নারীদের দুর্ভোগ দূর করতে, নারীদের গণপরিবহনে ওঠা ও বন্ধ করতে, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসহ সাধারণ আসন প্রদানে সহায়তা করতে এবং বাস চালক ও একে অপরের হেল্পারদের কাছ থেকে খারাপ আচরণ রোধ করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নারীরা যাতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যখন একজন মহিলা গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন, তাহলে অভিযোগ জানাতে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তা জানা কঠিন হতে পারে। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। রুটের উপর নির্ভর করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ফোন নম্বর গণপরিবহনের প্রকাশ্য স্থানে লিখে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া আমাদের দেশে গণপরিবহনে চালক ও সহকারী নিয়োগের কোনো নিয়ম নেই। মালিকেরা ইচ্ছামতো পরিবহন শ্রমিক নিয়োগ করেন। তাই গাড়িতে চালক ও সহকারী নিয়োগের বিষয়টি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে এবং তাদের অতীতের কার্যকলাপগুলি ফটোগ্রাফ এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য ব্যবহার করে যাচাই করার পরেই তাদের নিয়োগ দিতে হবে যাতে অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের দ্রুত সনাক্ত করা যায়। সর্বোপরি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচারণা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। কারণ দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে আর যাই হোক উন্নয়ন সম্ভব নয়।