সম্পাদকীয়

কলুষিত ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যে লেখা হয় ছাত্র আন্দোলনের গৌরবগাথা। সেই থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি দেশের স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও জনমুক্তির সব আন্দোলনে আছে ছাত্রদের উজ্জ্বল ভূমিকা। সেসব ক্যাম্পাসেই ছাত্ররাজনীতির আলোকছটা ম্লান হওয়ার পথে। বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে ছাত্ররাজনীতিতে পচন ধরেছে। তাই শিক্ষাঙ্গনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন সুস্থ রাজনীতির বিকাশ। কিন্তু আমরা ক্রমেই কেমন যেন ধৈর্যহীন, অসহিষ্ণু, অদূরদর্শী ও অসামাজিক হয়ে উঠেছি। বর্তমান সময় কালে শিক্ষক-ছাত্র দল বেঁধে নিজেদের নৈতিক সত্তা বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতির হাটুরের দলে নাম লেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। শিক্ষকদের প্রকাশ্য দলবাজির কারণে ছাত্ররাও তাদের পড়াশোনার পাট শিকেয় তুলে রেখে আজ সমাজে দাদাগিরি করার উন্মত্ততায় বেপরোয়া। এভাবে দেশ চলে না। এসব কর্মপন্থা বা কৌশল একসময় শেষ হয়ে গেলে সমাজ ধসে পড়বে। মেধা বলে সমাজে আর কিছু থাকবে না। সুতরাং আর দেরি নয়। কলুষিত ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতীতে ছাত্ররাজনীতির যে স্বচ্ছ এবং স্বার্থহীন ভূমিকা তা বর্তমান লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের কারণে নানাভাবে বিতর্কিত। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অন্ধ অনুসরণ করে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি খুন এমনকি ধর্ষণের সেঞ্চুরিতেও পিছিয়ে নেই তারা। যা সাম্প্রতিক ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করছে। দিন যতই যাচ্ছে ছাত্ররাজনীতির গতি-প্রকৃতি জটিল-কুটিল ও নোংরা হয়ে যাচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্যের মূল ধারা থেকে ক্রমাগত দূরে চলে যাচ্ছে আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো। বেশির ভাগ নেতাকর্মীর অধঃপতন জাতিকে ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত ছাত্রদের স্বার্থ-অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তাই ছাত্রদের হতে হবে দেশ, কাল ও সমাজসচেতন, সমাজহিতৈষী। ছাত্ররা একটি দেশের জাগ্রত অংশ। ছাত্রদের কোনোভাবেই উচিত নয় মূল দলের অন্ধ অনুকরণ করা। দেশ জাতির কল্যাণের প্রশ্ন ছাত্রদের সৎ, সচেতন ও নিরেপেক্ষ হতে হবে। ছাত্র যদি তার দেশ, কাল, সমাজ সম্পর্কে সচেতন না হয় তাহলে তার দ্বারা সমাজের কল্যাণ অসম্ভব। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোনো অন্যায়, অনাচার দুর্নীতি এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যদি প্রকট আকার ধারণ করে তখন ছাত্রদের বসে থাকলে চলবে না। এর প্রতিকার প্রতিরোধের জন্য সোচ্চার প্রতিবাদ করা ছাত্রদের দায়িত্ব। সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি দিয়ে জাতীয় রাজনীতিকেও ইতিবাচক দিকে প্রভাবিত করতে হবে এবং অপরাধ যে-ই করুক, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের ছাত্রসমাজকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেভাবে হাফ পাশ, নিরাপদ সড়ক আর কোটা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে বিদ্রোহ করেছে। তবেই ছাত্ররাজনীতিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button