হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে

বাড়ছে শীতের তীব্রতা
জেঁকে বসেছে শীত। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে দেশের উত্তর জনপদে। জানা যায়, জানুয়ারি মাসে দেশে একাধিক মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এখন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। কোনো কোনো এলাকায় কয়েকদিন ধরে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ। খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও বস্তি এলাকার শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের। এ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের মাঝে যে ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তা অপ্রতুল। শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় কোনো কোনো এলাকার মানুষ অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে সারা দেশের নিম্নআয়ের মানুষকে খুব কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা রকম আগাম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের ঘরবাড়ি এতই নাজুক যে তা শীত ঠেকাতে পারে না। শীত নিবারণের সুযোগ ও সামর্থ্য যাদের কম, তারা কম শীতেও কাবু হয়ে পড়ে। ছিন্নমূল মানুষের পক্ষে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে তাদের অনেকের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। ফলে তারা শীতজনিত বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। শীত মৌসুমে কয়েক ধরনের ভাইরাস অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সাধারণত শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরাই আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় হাসপাতালগুলোতে এ বয়সের রোগীদের বেশি ভিড় লক্ষ করা যায়। তাই শীতের শুরুতেই দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র, খাদ্য ও ওষুধসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হলেও দুঃখজনক হলো, শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে কম। আজকাল শহর-গ্রাম-গঞ্জের গরিব-দুঃখী মানুষের খোঁজখবর রাখার মতো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে দুস্থদের জন্য ত্রাণ বিতরণের তাগিদ দেখা যেত। এখন এ ধরনের মানবসেবামূলক কর্মকা-েও ভাঁটা পড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উচিত অতীতের মতোই দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো।