সম্পাদকীয়

উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কম

দেশে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। বর্তমান সময়ে আগের থেকে বেশ এগিয়েছে নারীরা। দেশে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। যদিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী, এমনকি বর্তমান সংসদের স্পিকারও নারী। নারী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোয় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলই এ শর্ত পূরণে সক্ষম হয়নি। অনেক ইসলামি রাজনৈতিক দলে নারী সদস্য প্রায় নেই বললেই চলে। এসব দলে নারী সদস্য থাকলেও তারা সক্রিয় নন। অর্থাৎ কোনো মিটিং, মিছিল, সভা, সমাবেশে তারা অংশগ্রহণ করেন না। ফলস্বরূপ তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই। এমনকি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো বড় দলগুলোয় দেখা যায় কমিটিতে নারী সদস্য অনেক কম। তিনভাগের একভাগ নারী সদস্যও কমিটিতে পাওয়া যায় না। দেশে জাতীয় পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সব জায়গায় নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। জাতীয় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সব জায়গায় সংরক্ষিত আসন এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কম। বর্তমানে চলছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি আর প্রচারণার যুগ সন্ধিক্ষণ। সেখানে নারীদের প্রভাব প্রতিযোগিতা সেভাবে চোখে পড়ার মতো নয়। খোদ সরকারি দল আওয়ামী লীগও ৩০০ প্রার্থীদের মধ্যে হাতে গোনার অবস্থায় ২০-২৪ জন। আর অন্যান্য বিরোধী দলের কথা বাদই দিলাম। জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদও দলের পক্ষ থেকে দাঁড়ানোর অনুমতি না পাওয়ার দৃশ্য স্বস্তিদায়ক নয়। যে ব্যবসা বাণিজ্যে এক সময়ে নারীদের অনীহা ছিল সেখানে আজ উদ্যোক্তা তৈরির কাতারে সংশ্লিষ্টরা আর হাতে গোনারও অবস্থায় নেই। গ্রামে, গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষিত নারীর সম্মানজনক পদে অভিষিক্ত হওয়া যেন সময়ের অপরিহার্য দাবি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে অবিকশিত অধ্যায় রয়ে গেছে রাজনীতিতে নারীর অবস্থান। এ ছাড়া বস্তুত নারীদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব। একজন নারী পথে-ঘাটে মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করবে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারটি অনেক পরিবার ঠিক মেনে নিতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে এগিয়ে নেওয়ার পথকেই নারীরা বেশি প্রাধান্য দেন। তাই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। যেহেতু বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাই রাজনীতিকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক পলিসি বা কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। আমাদের দেশের রাজনীতির যে পুরুষ চরিত্র তার পরিবর্তন করতে হবে। নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের বিলোপ করে মূলধারার প্রতিনিধিত্ব করার পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাহলেই রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানো সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button