প্রবাসী আয় বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন

প্রবাসীদের জন্য চাকরির সুযোগ আগের তুলনায় কমেছে। প্রবাসীদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুবই কম। দক্ষ ও শিক্ষিতের সংখ্যা কম হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশিরা ভালো চাকরি পায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি রয়েছে, যাদের ৮৮ শতাংশই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া দেশত্যাগ করেছে। আর বাকি ১২ শতাংশ প্রবাসী কারিগরি শিক্ষা, ভাষা, কম্পিউটার ও ড্রাইভিং-এ চারটির কোনো একটির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ ছেড়েছে। বেশিরভাগ প্রবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৬২ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৬ শতাংশের উচ্চশিক্ষা রয়েছে। তাই বিদেশে গিয়ে অদক্ষ আধা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে যেন চাকরি করতে না হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের চাকরি যাতে পেতে পারেন-তেমন যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে। দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার এখন অনেকটাই মনোযোগী হয়েছেন। তবে অন্যান্য দেশের কারিগরি জ্ঞান থাকা শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক-কর্মীদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রবাসিরা অনেক দুর্বল এবং অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। ফলে তারা উচ্চ হারে পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে না। অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে সেখানে কাজ করেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ এখনও বেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু যদি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তেমন উপযুক্ত কাজ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মীরা বিদেশে যেতে পারে তাহলে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে অন্য দেশের কর্মীদের টেক্কা দিতে পারবে। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। এসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে, তাতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি আরো শক্তিশালী হবে। অর্থনীতিতে এবং সমাজে রেমিট্যান্স ভালো ভূমিকা রাখে। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাক্সিক্ষত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে, সেসব দেশে জনশক্তি পাঠানোর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই প্রবাসী আয় বাড়ানো সম্ভব হবে।