সম্পাদকীয়

শান্তিপূর্ণ-উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হোক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

দেশে নির্বাচন এলেই সংহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা তারই একটি জঘণ্য উদাহরণ। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণাও পাওয়া গেছে কিছু রাজনৈতিক দল, মূলত যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না -তাদের কাছ থেকে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা ও সংবিধান বাস্তবায়নে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে আজ রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠাচ্ছে ইসি। সব ভোটার যাতে নির্বিঘেœ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন ইসির ভাবনায় শুধু নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ভোটের মাঠ এখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। আমরা কমিশনের বক্তব্যে আশ^স্ত হতে চাই, তবে আশঙ্কাকেও দূর করতে পারি না। সংঘাত-সহিংসতা ও সন্ত্রাসমুক্তভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক- এটাই প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আর তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। ফলে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর হতে হবে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নির্বাচনী উৎসবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা কাম্য হতে পারে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ভোটারদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়া এবং ভোটারদের উপস্থিতি কম হলে ভোট ডাকাতি ও জাল ভোটের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়বে এমন আশঙ্কাও এর আগে উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সহিংসতা-সংঘাতের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নির্বাচনের আগে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন ও তার পরের দিনগুলোতে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না -এজন্য নির্বাচন কমিশন ও শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে -এমনটি কাম্য।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button