দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিন

শেয়ারবাজার কারসাজি
কোনো দেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম ভিত্তি হলো পুঁজিবাজার। পরিতাপের বিষয়, বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজারকে আমরা ভালো ও নির্ভরযোগ্য অবস্থানে দেখতে পাইনি। বর্তমানেও দেশের শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো নয়। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা এ পরিস্থিতিকে নীরব ‘রক্তক্ষরণ’ হিসাবে অভিহিত করছেন। জানা যায়, পুঁজিবাজারে যেসব তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে ফার্স্ট ফাইনান্স অন্যতম। অনিয়ম, দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদের কাউকে বাদ না দিয়ে বসানো হচ্ছে নতুন আরও পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালককে, যারা প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বিএসইসির আশা, এ পরিবর্তনের ফলে পুরোনো এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা ঋণ আদায়ে সহায়তা করবেন। জানা গেছে, বাজারের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের চেয়ে দায় ২৪৬ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি গত ১৪ বছরে বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশও দিতে পারেনি। স্বভাবতই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বাজারের জন্য দায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি, আইন লঙ্ঘন বা অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত অর্থ ফেরত আনতে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে। দেখা যায়, দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি বাজার মূলধনীকরণ। প্রাইমারি বাজারেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারাতে দেখা গেছে। অবশ্য শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস প্রবর্তনসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু তাতে অস্থিরতা কাটেনি। অস্বীকার করার উপায় নেই, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ছাড়াও ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় কমে যাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচনসহ বেশকিছু ইস্যু বাজারের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর ওপর এসব নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদাহরণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এমন অবস্থায় এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।