সম্পাদকীয়

আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে মাদকের বিস্তার

দেশে মাদক সেবন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই মাদকের শুরু হয়েছিল আশির দশকে। এ সময় অনেক মধ্যবয়সী মানুষও হেরোইন ও ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ে। সমাজের সকল বিভাগে এ মাদকের প্রাপ্যতা এবং ব্যবহার ছিলো লক্ষণীয়। বাংলাদেশে ফেনসিডিল পাচারের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত এলাকায় অনেক কারখানাও তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছরই দেশে মাদকের অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশে সবচেয়ে বেশি ইয়াবার ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৬ জুন মাদকদ্রব্য জব্দের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দেশে হেরোইনের অপব্যবহার বেড়েছে। গাঁজার অপব্যবহার ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে গাঁজার অপব্যবহার কিছুটা কমেছে। ফেনসিডিল ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কিছুটা কমলেও ২০১৭ সালে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে স্থিতিশীল ছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ইনজেক্টিং ড্রাগের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে কমে ১৭ সালে আবারো বাড়ে। এই সময়ে বিভিন্ন সংস্থা অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। তবে এই পরিমাণ দেশে ছড়িয়ে পড়া মোটের তুলনায় কোনোভাবেই ২০-২৫ শতাংশের বেশি নয় বলে মনে করছেন এ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো। অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারত থেকে ২৩ রুটে, মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবনের ১৫টি রুট ব্যবহার করে দেশে ঢুকছে মাদক। বিশ্বের অনেক দেশেই গোপনে মাদক তৈরি হয়। এশিয়ার তিনটি অঞ্চলকে মোটা দাগে মাদক উৎপাদনের প্রধান উৎস বলে বিবেচনা করা হয়। মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের সেসব এলাকা “গোল্ডেন ক্রিসেন্ট” নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থিত এবং পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানের সীমান্তে অবস্থিত। এর মানে বাংলাদেশের তিনটি দিকেই মাদকের উৎপাদন ও কারবারিরা শক্তিশালী ও কার্যকর অবস্থান রয়েছে। এই তিন অঞ্চলের মাদক প্রস্তুতকারীরা নিরাপদ ট্রানজিট দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পছন্দ করে। তাই বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন না করে ট্রানজিট সুবিধার কেন্দ্রে রয়েছে যা আমাদের জন্য ভয়ানক ভাবনার একটি বিষয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, এখন মাদক ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার ও ১ লাখ ৬৫ হাজার বিক্রির নেটওয়ার্ক। এদের মাধ্যমে মাদক খাতে বছরে লেনদেন হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর বেশকিছু সংস্থার তথ্যানুযায়ী অবৈধ মাদক আমদানিতে প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে দেখা যাচ্ছে মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। মাদক মহামারীর সর্বনাশা বিস্তারের যেভাবে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি করছে, সেভাবে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে সৃষ্টি করছে বন্ধ্যত্ব। তাই এখনি কর্তৃপক্ষকে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ। তার তা না হলে এই মাদক আগামী প্রজন্মকে ঠেলে দেবে হুমকির মুখে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button