সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

ঐতিহ্য হারাচ্ছে তাঁতশিল্প
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের হস্ত চালিত তাঁত শিল্প এদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। তবে বর্তমান সময়ে ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত শিল্পের বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা হয়ে পড়েছে দুরূহ। টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে এখন প্রাচীন এই শিল্পটি। তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়াসহ প্রায় জেলা ব্যাপি। এ সকল এলাকায় তাঁতীদের মাঝে বর্তমানে দারুন হতাশা বিরাজ করছে। একদিকে তাঁত শিল্পের উৎপাদন কাজের প্রয়োজনীয় কাচামাল সূতা, রং এবং রাসায়নিক দ্রব্যের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি এবং সেই সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁতের কাপড়ের বাজারে ক্রয় বিক্রয়ে মন্দাভাব বিরাজ করায় এই জেলার তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে। ইতিমধ্যেই এই এলাকার প্রায় অর্ধেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এবং বাকি অর্ধেক দীর্ঘদিন যাবৎ কাপড়ের বাজারে মন্দাভাব থাকায় উৎপাদিত কাপড় বিক্রী করতে না পারায় গুদাম ভর্তি কাপড় থাকলেও তাঁত শ্রমিকদের মুজুরী ও ব্যাংক, এনজিও ও সমিতির নিয়মিত কিস্তি দিতে না পাড়ায় অনেকেই এখন হতাশ। সেই সাথে সূতা রং ক্রয় করার মত টাকা মহাজনের হাতে না থাকায় তাঁত চালু রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে চালু তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের টাকা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক এবং মালিক বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভবিৎষতেও এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই চালু তাঁতগুলোও বন্ধ হয়ে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁত শিল্পের এই দুর্দিনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় দরিদ্র তাঁতীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সংসার চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে তাঁতীরা, ফলে স্ত্রী, পুত্র নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এমতবস্থায় তাঁতীরা সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ, বিদেশ থেতে উন্নত মানের সূতা, বিতণের ব্যবস্থা করলে তাঁত শিল্পকে রক্ষা করা যাবে। এ ছাড়াও নায্য মূল্যে তাঁতীদের উৎপাদিত কাপড় বিক্রির জন্য সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আর তবেই রক্ষা হতে পারে এই উপজেলায় বন্ধ হওয়া হাজার হাজার তাঁত।