সম্পাদকীয়

কৃষিজমি রক্ষায় উদ্যোগ জরুরি

মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কৃষিজমি এবং সেই জমির গুণমান রক্ষায় অনেক আইন ও নীতিমালা থাকলেও সেসবের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। ফলে প্রতিনিয়ত কৃষিজমি কমছে। কমছে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে ইটভাটা। কৃষিজমির ওপরের দু-তিন ফুট মাটিতে অর্থাৎ টপ সয়েলে থাকে অসংখ্য অণুজীব, যারা জমির উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইটভাটাগুলো সেই মাটি কেটে নিয়ে ইট বানায়। দরিদ্র কৃষকরা না বুঝে, অভাবে পড়ে কিংবা চাপের মুখে সেই মাটি বিক্রি করে দেন। তারপর যে মাটি থাকে, তাতে ফসল উৎপাদন হয় না বললেই চলে। অথচ সারা দেশে হাজার হাজার ইটভাটা প্রতিনিয়ত এই কাজ করে যাচ্ছে। মাঠের পর মাঠের কৃষিজমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। অনেক কৃষকই তাঁদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও এক বিঘা জমির মাটি বিক্রি করলে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতে জমির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পূরণ হতে বহু বছর লেগে যাবে। পাশাপাশি জমি নিচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় পানি জমে যাবে। কিন্তু কৃষিজমির এই ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু ইটভাটায় নয়, যেখানে জমিতে বালু আছে, সেখানে মাটি খুঁড়ে বালু উত্তোলন করা হয়। ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে ফেলা হয়। অন্যান্য অকৃষি খাতেও কৃষিজমির ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি ২০১৯-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গড়ে প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আবাদি জমি কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। তার পরও উপকূলীয় এলাকায় নোনা পানির অনুপ্রবেশের কারণে জমির উর্বরতা কমছে। কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। তামাক চাষের মতো কিছু ফসল খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য জমির পরিমাণ কমাচ্ছে। জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯-এ অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহারকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষিজমি সুরক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে এসব আইনের বাস্তবায়ন প্রায় নেই বললেই চলে। নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ইটের চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। কিন্তু সে কারণে কৃষিজমি ধ্বংস করা যাবে না। ব্লক ইট বা ইট তৈরির পরিবেশসম্মত অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। আমরা মনে করি, কৃষিজমি সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button