সম্পাদকীয়

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন

কর্মক্ষেত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে দিনের বড় একটি অংশ কর্মক্ষেত্রে কাটাতে হয়। এ ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জন যেমন মুখ্য, ঠিক তেমনি নিরাপদ কর্মপরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প-কারখানা কয়েক গুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। উন্নত-অনুন্নত প্রায় সব দেশেই কর্মক্ষেত্রে কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতি যে খানিকটা ভিন্ন তা এড়ানোর অবকাশ নেই। কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রাণহানির কারণগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিকা-, বয়লার বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দেয়াল-ভবন-ছাদ-মাটিধস, ভবন থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি মুখ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নেয়া হলে বহুলাংশেই দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বস্বীকৃত নীতি হলো-‘সেফটি ফার্স্ট’ বা নিরাপত্তাই প্রথম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তামূলক আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে শিল্প দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে এবং প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান থাকলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয় না। যেখানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কারখানা মালিক ও সরকারের। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ নানা মহল থেকেই বারবার দেয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তদারকির দায়দায়িত্ব যাদের রয়েছে, তাদের উদাসীনতা কিংবা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগও কম নয়। যেখানে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে, কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফলে এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক উপকরণ সরবরাহ করা উচিত। কর্মীদের সচেতনতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নিবিড় তদারকিও জরুরি। কেননা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহতের এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেজন্যে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে পরিদর্শনের আলোকে অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। নিতে হবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়। এটি করা না গেলে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি নেতিবাচকই থেকে যাবে। পোশাক রপ্তানিসহ আমাদের চামড়া রপ্তানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, জুতা ও বাইসাইকেলসহ রপ্তানি পণ্যগুলো বিদেশে নির্বিঘেœ রপ্তানিতে যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে সব কারখানা ও তার পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা দূরকল্পে সরকারি নীতিসহায়তা ও তদারকি আরো জোরদার করা উচিত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button