সম্পাদকীয়

ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

কক্সবাজারের প্যারাবন

কক্সবাজারের চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের বদরখালীস্থ মাতামুহুরী নদীর মোহনায় সৃজিত প্যারাবনের প্রায় পাঁচ হাজার চারাগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এমনকি পূর্বাংশে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারাবনের মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করার কাজও শুরু হয়েছে। সাগরের নোনা পানি সহ্য করে উপকূলীয় ভূমিতে যে বনের সৃষ্টি হয়, কক্সবাজার অঞ্চলে তা প্যারাবন হিসেবে পরিচিত। সেই প্যারাবন ধ্বংসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতার পরও এই এলাকায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্যারাবন ছিল। সেসব প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি চাষ, লবণ চাষসহ আরো অনেক অর্থনৈতিক কর্মকা- চালানো হয়েছে। এখন উপকূলীয় অনেক এলাকায় প্যারাবনের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। যেসব এলাকায় সামান্য পরিমাণে প্যারাবন রয়েছে, সেগুলোর ওপরও প্রভাবশালীদের লোভের দৃষ্টি রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা প্যারাবন ধ্বংসে মেতে ওঠে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কয়েকজন প্রভাবশালী দুই শতাধিক শ্রমিক লাগিয়েছিল বন ধ্বংসের কাজে। উদ্দেশ্য ছিল, খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন এসে বাধা দেওয়ার আগেই যাতে একটি বড় এলাকা বৃক্ষশূন্য করে দেওয়া যায়। হয়েছেও তাই। প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই হাজার পাঁচেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং বাঁধ দিয়ে একটি অংশে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর বিরানভূমিতে পরিণত হওয়া চকরিয়া উপকূলে সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজে হাত দেয় জাপানভিত্তিক পরিবেশবাদী এনজিও ওআইএসসিএ। এই সংস্থার পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিবছরই জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী এসে বিলুপ্তপ্রায় চকরিয়া সুন্দরবনের জেগে ওঠা চরে প্যারাবন সৃজন করেন। একইভাবে বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ সমুদ্র উপকূলের বদরখালী ইউনিয়নকে রক্ষায় প্যারাবন সৃজনের কাজ শুরু করে। কেওড়া, বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক লাখ চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু আজ সেই বন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। অথচ উপকূলীয় এলাকায় গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক বন শুধু কাঠ দেয় না, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে জনপদকে রক্ষাও করে। সিডর ও আইলার সময় কিংবা অতীতের আরো অনেক ঘূর্ণিঝড়ের সময় তার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলেও অতীতে অনেক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস নিষ্ঠুর আঘাতের চিহ্ন রেখে গেছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় প্রাণ হারিয়েছিল ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গিয়েছিল কয়েক লাখ গবাদি পশু। কিন্তু মানুষ বর্তমান বিবেচনায় অতীত-ভবিষ্যৎ কোনো কিছুকে পরোয়া করে না। তাই চকরিয়ার সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের বানাতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই পরিবেশবিনাশী অপতৎপরতা রোধ করবে এবং নিয়মিত মামলা করাসহ জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button