সম্পাদকীয়

শিক্ষার বেহাল দশা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

দেশের অবহেলিত শিক্ষা খাতের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হলো প্রাথমিক শিক্ষা। অথচ পৃথিবীর সব উন্নত দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো, ব্যতিক্রম। এখনো আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষ কাঠামোতে গড়ে তোলা যায়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করেন। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রথম শর্ত হল চমৎকার শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষা অন্য যেকোনো স্তরের শিক্ষার চেয়ে বেশি কঠিন। সংবেদনশীল এবং কোমল শিশুদের বোঝার সাথে শেখানো উচিত। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় সেক্টরে দেখা যায় যে শিক্ষক নিয়োগের পর শিক্ষক হয়ে ওঠেন। অনেক পরে, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। যোগ্য শিক্ষকের অভাবের কারণে, অনেক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে খারাপ করে, যা তাদের পরবর্তী শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে ভালো শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মান উন্নত হবে না। এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। কেননা অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পাঠ্যপুস্তকের উপর নির্ভর করে। পরীক্ষার প্রশ্নে ম্যানুয়াল প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত। যেখানে একজন শিক্ষিত ও যোগ্য জনশক্তি যে কোনো দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যতদিন শিক্ষার মান উন্নত না হবে ততদিন মূল্যবান শিক্ষাগত লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। যেহেতু আমাদের উচ্চশিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন এবং বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে আছে। আর এর প্রধান কারণ শিক্ষার ভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো ও যোগ্য শিক্ষক। কারণ দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই মানবসম্পদ উন্নয়নের ভিত্তি।
স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মান উন্নয়ন করা কঠিন হবে। অন্যান্য দেশে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মর্যাদা একজন ডাক্তার বা আইনজীবীর সমান। উচ্চ বেতন, পেশাগত স্বাধীনতা এবং সামাজিক মর্যাদার কারণে মেধাবীরা প্রাথমিকভাবে সেখানে শিক্ষক হিসেবে আকৃষ্ট হন। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাপারটা উল্টো। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় পিছিয়ে থাকে। দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যদিও সরকার উদ্যোগ নিলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা কঠিন হবে না এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে। তাই এই ভিত্তিটি আবশ্যই সরকারের নজর দিতে হবে। এটা ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে উঠবে না। প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button