সম্পাদকীয়

তীব্র ঠা-ায় বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া

দেশের বিভিন্ন জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল ধরা হয়। তবে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দেশের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ১০-এর নিচে নেমে গেছে। শীত বাড়ায় দেশে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ থাকায়, দূষিত পানি পান ও খাবার গ্রহণের কারণে এই সময়ে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে এই তীব্র শীতে ঠা-া-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ¦র ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। বিশেষ করে নিউমোনিয়ার প্রকোপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগ থেকে সর্তক না থাকলে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের সংক্রমণজনিত একটি ব্যাধি। এই রোগে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে বুকে পানি জমতে পারে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়। আর এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা। এক গবেষণায় দেখা যায়, শীতের এ সময়টাতে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো নিউমোনিয়া। সময়মত এর চিকিৎসা না নিলে এই রোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা কমে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ১১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি বেশির ভাগ শিশুরই বয়স পাঁচ বছরের নিচে এবং তারা নিউমোনিয়া আক্রান্ত। শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরন বুঝতে না পেরে অনেক অভিভাবক বেশি দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। এতেকরে বাড়ছে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি। শুধু যে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়। শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরাও। কারণ শিশুদের মতো বৃদ্ধদেরও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এমতাবস্থায় সচেতনতার নেই কোন বিকল্প তাই অভিভাবকদের এ রকম আবহাওয়ার সময়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি। সর্বশেষে শীতের এই মৌসুমে সবাই যদি একটু সর্তক থাকা যায় তাহলেই অনেক মানুষ এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে বলে আশা করা যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button