ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক
দেশে ওষুধের অপব্যবহার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়, এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এবং সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করি না। ওষুধ খেতে আমরা যতটা তৎপর, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানতে ততটাই উদাসীন। আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করি, কখনো আত্মীয়, কখনো বন্ধুর পরামর্শ নিই, কখনো চিকিৎসকের চেয়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর বেশি নির্ভর করি। যদি কখনো-বা বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিই, ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ অনেক সময় মানি কম। সময়মতো ওষুধ খাওয়া, খাওয়ার আগে, না পরে তা বুঝে খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, এসব আমরা খেয়াল রাখি না। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি উদাসীন থাকি। অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসির লোকজনের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। যা খুবই বিপজ্জনক। ফলে ঔষধের অপব্যবহার রোধে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। ব্যাপক গবেষণা চলছে। বাংলাদেশেও এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতিই হচ্ছে বেশি। দেশের হাসপাতালগুলোতে যেসব সংক্রমণ নিয়ে রোগীরা ভর্তি হয়, এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ক্লেবসিয়েলা, ই-কোলাই, সালমোনেলাসহ বেশি ক্ষতিকর ছয়টি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে নিউমোনিয়া, মূত্রনালির সংক্রমণ, পেটের সমস্যা, টাইফয়েড, সেপসিসসহ আরো কিছু সংক্রমণ হয়ে থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ব্যবহৃত সব অ্যান্টিবায়োটিক ৯০ শতাংশ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তৃতীয় ধাপের বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন, যেগুলো সাধারণত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ব্যবহৃত হয়। এর পরও অপব্যবহার বন্ধ করা না গেলে অচিরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তখন সাধারণ সংক্রমণেও ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ মারা যেতে থাকবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগী, চিকিৎসক, ওষুধবিক্রেতা এবং প্রশাসনের যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। ওষুধ যেহেতু একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী পণ্য, তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও অনেক বেশি। দোকানে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান করা উচিত। শিক্ষিত বা ট্রেনিংপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ছাড়া অন্য কেউ যেন ওষুধ বিক্রি না করে, তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অননুমোদিত ওষুধপত্র বিক্রি বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়াও সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধের সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করাও জরুরি। আমাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সুস্থভাবে সুস্বাস্থ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, তার জন্য ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।