সম্পাদকীয়

কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

বন্ধ হচ্ছে না র‌্যাগিং

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় শিক্ষার্থীদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার নজির নতুন নয়। কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ‘বড়ভাই’দের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা নানারকম অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে। ছাত্রী হলের গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার পর এবার লালন শাহ হলের গণরুমে এক নবীন শিক্ষার্থীকে একই স্টাইলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত বছরের জুনে একই ছাত্র হলের একই কক্ষে আরেক নবীন ছাত্রকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব নির্যাতনের সঙ্গে ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় গত বছর কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কারও করে। এরপরও থেমে নেই এহেন কাজ। অভিযোগ আছে, র‌্যাগিংয়ের দু-একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও ছাত্রলীগ নেতারা এর অধিকাংশই ধামাচাপা দেন। এ কারণে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আবার বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলেও ছাত্রলীগ নেতারা তা তুলে নিতে বাধ্য করেন। ভুক্তভোগীরা তাই মদদপুষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খোলেন না। তাদের লাগামহীন কর্মকা-ে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসনের তদন্তে সঠিক তথ্য উঠে আসুক। অভিযুক্তরা যে দলেরই সমর্থক হোক, তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনতে হবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় র‌্যাগিং এখন একটি আতঙ্কের নাম। জানা যায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সুশাসনের অভাবে এমনটা ঘটছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের র‌্যাগিং কালচারের অবসান জরুরি। সাধারণভাবে র‌্যাগিং শব্দের অর্থ ‘পরিচয়পর্ব’ হলেও বাস্তবে এ নামে চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এতে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়েও চলে যায়। কাউকে আবার ডাক্তারের শরণাপন্নও হতে হয়। মনে রাখতে হবে, যে ছেলেটি র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে, সে নিশ্চয়ই আগামীতে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় র‌্যাগিং করার পরিকল্পনা করবে। ফলে এ অপসংস্কৃতি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা। সেখানে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকরা র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button