সম্পাদকীয়

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

রমজান এলেই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায় কোন কারণ ছাড়াই এ যেন অঘোষিত নিয়ম হয়েগেছে। কিন্তু এবার রমজানের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি, মুরগী ও মাছের দাম বেড়েছে। কারসাজি করে মিল পর্যায় থেকে ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে দেশের পাইকারি বাজারে বেড়ে যায় চালের দাম। প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও। তখন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। কয়েকদিন আগে মিল পর্যায় থেকে কারসাজি করে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সারা দেশের পাইকারি বাজারে হুহু করে বেড়ে যায় দাম। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তখন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। অবশ্য এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকির পর দাম প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমেছিল। এদিকে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ১৯০-২০০ টাকা। এ ছাড়া সোনালি ও লেয়ার মুরগির দামও বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। এমনকি বাজারে এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। খুচরায় প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা। যদিও বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে কিছু পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। কিন্তু শুল্কহার হ্রাসের পর দফায় দফায় দাম বাড়ছে। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি শুল্ক হ্রাসের পর চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৫০ টাকা। এ ছাড়া খেজুর, তেল ইত্যাদি পণ্যের দামও বেড়েছে। বলা বাহুল্য, দাম কমার এ উদ্যোগে দাম না কমে কেবল রাজস্ব আদায় কমছে। সুতরাং কেবল শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং রমজানের আগে শুল্ক কমানোয় বিত্তবান ব্যবসায়ীরা একচেটিয়াভাবে লাভবান হবেন। কেননা ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেনি। দেশে ধান-চালের বাজারে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁছাতে কয়েক বার হাতবদল হয়। প্রতিবার হাতবদলের সময় যোগ হয় খরচ ও মুনাফা। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে থাকেন চালকল মালিকরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুত করেন, এ তথ্য নতুন নয়। এ ধান সিন্ডিকেট করে মিলারদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করা হয়। যেসব কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, সেই তথ্যগুলো সবারই জানা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। আশঙ্কা করা যায়, দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু রাতারাতি মূল্যস্ফীতির কারণগুলো দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু সাময়িকভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এটি করা সম্ভব বাজার তদারকির মাধ্যমে। তাই শিগগিরই কঠোর তদারকি এবং সে মোতাবেক কাজ শুরু করতে হবে। তদারকি কেবল মাঠ পর্যায়ে করতে হবে এমন নয়। এ তদারকি শুরু করতে হবে শুরু থেকেই। রমজানকে ঘিরে পণ্য আমদানি কখন থেকে শুরু হয় সে সময়কে সরবপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে এবং সরজমিনে বাজার তদারকি করতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার তদারকিতে সরকারকে আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button