সম্পাদকীয়

বাড়ছে নিষিদ্ধ টেস্টিং সল্ট এর ব্যবহার

বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার মৌলিক অধিকার। আর এই অধিকারের বিষয়টি সরকারের নিশ্চিত করতে হবে। টেস্টিং সল্ট মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেস্টিং সল্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দেশে খাবারের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্টের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এই লবণ ব্যবহারে খাবারের স্বাদ বাড়ে, তাই কোনো বাছ-বিচার না করেই টেস্টিং সল্ট রান্নায় যোগ করা হচ্ছে। লবণটি পরিমাণে বেশি ও দীর্ঘদিন খেলে ডেকে আনে স্বাস্থ্যের জন্য মহাবিপদ। দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের নূন্যতম মাত্রা নির্ধারণ করা থাকলেও বাংলাদেশে মাত্রা নির্ধারণ করা নেই। ফলে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও এর বহুল ব্যবহার হচ্ছে। শুধু খাবারকে মুখরোচক বা মজাদার করার জন্য টেস্টিং সল্ট প্রধানত রাস্তার পাশের ফুসকা, চটপটি, হালিম থেকে শুরু করে চায়নিজ ও থাই খাবারে ও নামীদামী হোটেল, বিয়ে, মেজবানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রান্নায় এটি অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। অনেকে ঘরোয়াভাবে তৈরি খাবারেও ব্যবহার হচ্ছে এই নীরব বিষ। এক গবেষণায় দেখা যায় টেস্টিং সল্ট মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে মনে হয়, খাবারটি খুবই সুস্বাদু। ওই খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে। পাশাপাশি টেস্টিং সল্ট মানবদেহে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিষিয়ে তোলে। ফলে স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। অ্যাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা টেস্টিং সল্ট খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া এটি মস্তিষ্কে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ঘুম কম হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে স্বাভাবিক খাবার অরুচিকর লাগে। কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) যে-সব খাদ্যদ্রব্য মনিটর করে সেই তালিকায়ও নেই পণ্যটি। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আইনে আছে, খাবারের সমস্ত প্যাকেটের গায়ে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট ব্যবহার করা হয়েছে লেখা থাকতে হবে। সল্টের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে, এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে সমস্ত সমস্যা হতে পারে সেগুলো তালিকায় উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই মানছে না বাংলাদেশের টেস্টিং সল্ট ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো। তাই এখনি জনস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নিতে হবে কার্যকারী পদক্ষেপ। টেস্টিং সল্টের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে প্রচার প্রচারণা করতে হবে। জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। টেস্টিং সল্টের ব্যবহার, আমদানি এবং বিক্রয়ের গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ণয় করতে হবে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ হলে আইন করে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই টেস্টিং সল্ট ব্যবহার বন্ধ করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button