জনস্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত

জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধি
প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম মাত্র ৭৫ পয়সা, অকটেনের দাম ৪ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৩ টাকা কমিয়েছে সরকার, যা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে মোটেই সংগতিপূর্ণ নয়। অথচ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কদিন আগেই বলেছিলেন, দেশে জ্বালানি তেলের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। কিন্তু বাস্তবে যা করা হলো, তা নামমাত্র মূল্যহ্রাস। অবশ্য বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। এভাবে প্রতি মাসেই দাম সমন্বয় করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তেলের দাম আরও বেশি কমানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফার হার বাড়াতে তেলের দাম কমানো হয়েছে তুলনামূলক কম। জানা যায়, ভর্তুকি সমন্বয়ের কথা বলে দাম বাড়ানোর পর গত অর্থবছরে বিপিসির মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তারা সরকারকে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেও ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে সংস্থাটি; অথচ দাম সমন্বয় করা হয়নি। স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালুর কথা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ৬ মাস পর এখন সেটা চালু করা হলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো সুফল মিলবে না। কারণ এদেশে তেলের দাম কমলে পরিবহন ভাড়া কমে না; কিন্তু দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে হলে যখন বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে বেশি থাকে, তখন বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। উল্লেখ্য, সরকার ২০২২ সালের আগস্টে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে গণপরিবহন, কৃষি, শিল্প, পণ্য ও সেবা খাতে। দেশের মানুষ যখন তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই করছিল, তখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের এ লড়াইকে আরও কঠিন করে তোলে। স্বভাবতই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। বস্তুত জ্বালানি তেলের মূল্যের সঙ্গে দেশের অন্যান্য খাতের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই এর দাম বৃদ্ধি, হ্রাস বা সমন্বয় যা-ই করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা উচিত। দেশে জ্বালানি তেলের দামের উল্লম্ফনের পর বিশ্ববাজারে এর দাম কমে আসছিল অনেক দিন ধরেই। কাজেই আরও আগে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে এর সুফল পেত দেশবাসী। এখন সরকার যখন বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন এর সুফল যাতে দেশবাসী পায়, তার ব্যবস্থাও করা দরকার। এক্ষেত্রে বিপিসির স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।