সম্পাদকীয়

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

রাজধানীতে অগ্নিকান্ড

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বসতি নির্মাণের কারণে ঝুঁকির মধ্যে আছে মেগা সিটি ঢাকা। বাসযোগ্যতার বিবেচনায় তলানিতে অবস্থান করছে জনবহুল এই শহরটি। কারণ নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী নেই প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো, সবুজ এলাকা, খেলার মাঠ ও জলাশয়। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। কিন্তু এত জনবহুল একটি শহরে নিশ্চিত হচ্ছেনা মানুষের নিরাপত্তা। রাজধানী ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশের নগরগুলোয় ঘটিত অগ্নি দুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। প্রতিটি অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর অনুমতি ও প্রত্যয়নপত্রের ঘাটতি উদ্ঘাটন সরকারি তদারকিতে গাফিলতিরই সমার্থক। আইনানুযায়ী, কোনো ভবনে রেস্তোরাঁ স্থাপনে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রায় ১০টি প্রত্যয়নপত্র বা সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই সনদগুলো যথাযথভাবে প্রদান, পরবর্তী পরিচালনায় তার ব্যত্যয় এবং এই সনদগুলো ছাড়াই বিভিন্ন পরিষেবার সংস্থান হয়েছে কি না তা দেখার দায়িত্ব যেন কারও নেই। বহুতল ভবনে অনেক রেস্তোরাঁ থাকতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, পরিকল্পনা ও অনুমোদন ছাড়াই যখন তা করা হয় তখন তা শুধু দোষ নয়, তখন এই অপরিকল্পিত নির্মাণ পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শামিল। এজন্য ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীদের কিছু বিষয়ে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফায়ার এক্সিট, ফায়ার ডোর, ইমার্জেন্সি লাইটিং সিস্টেম, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম এবং ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে স্বয়ংক্রিয় ফায়ার স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম ইনস্টল করতে হবে। রান্নার তেল, এলপিজি গ্যাস এবং অন্যান্য দাহ্য সামগ্রী পৃথকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে, এটি করার বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। উচ্চ মানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক তার এবং ওভেন ব্যবহার করা উচিত। অপরদিকে সরকারকে গুরুত্বপুর্ণ কিছু দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিল্ডিং কোডের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবনগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে বাধ্য করতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি সহজ করতে হবে, বাণিজ্যিক ভবনসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিমুখী কারখানার মতো অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি করতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর ৭.৫% ভ্যাট এবং অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার পরামর্শ পরিষেবার ওপর ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। যারা আইন লঙ্ঘন করে বিপজ্জনক ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button