সম্পাদকীয়

অগ্নিকা-ের ঝুঁকিতে রাজধানীর ২৬০০ ভবন

রাজধানীর ঝুঁকিতে থাকা প্রায় অর্ধেক ভবনই হলো বিপণিবিতান। অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতান তথা মার্কেটগুলোর বেশিরভাগ-ই রাজধানীর পুরনো ঢাকা এলাকায়। এগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেট, ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা, টিকাটুলীতে অবস্থিত রাজধানী সুপারমার্কেট, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট। বাকীগুলো হলো- সিদ্দিক বাজারের রোজলীন ভিসতা, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট ও মায়াকাটরা (২২ মার্কেট এবং চকবাজারের শহিদুল্লাহ মার্কেট ও শাকিল আনোয়ার টাওয়ার। বর্তমানে ঢাকার এক হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান সহ মোট ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব স্থানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত, অথচ তারা জানেন না যে এগুলো আগুনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। এরপরেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। একসময় পাট ও তুলার গুদামে মাঝে মাঝেই আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটগওলোয় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, বহু কথিত আধুনিক মার্কেটেও স্মোক ডিটেক্টরসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না; এমনকি পানিও নয়। আবার থাকলেও প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী ছিল না। দেশে-বিদেশে বহুল প্রচারিত তাজরীন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য। আবার নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো ভয়াবহতাও আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চকবাজারেও পানির রিজার্ভসহ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বললেই চলে। একই কথা প্রযোজ্য বহুতলবিশিষ্ট বাসাবাড়ি এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসের ক্ষেত্রেও। যে কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বিপুল প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষতি দেখে যাওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। যখন কোনো জনবহুল এলাকা বা শিল্প-কারখানায় ঘটে, তখনই আগুনের ভয়াবহতা আমাদের নাড়া দেয়, কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঢাকার চকবাজারস্থ চুড়িহাট্টা, নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকা-, মিরপুরস্থ ভাষানটেক, গুলশান-২-এর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার ও সুপার মার্কেট, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, মিরপুরস্থ সিটি পার্ক ভবনের অগ্নিকা-, বিশেষ করে বনানীর এফআর টাওয়ারের ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তবে যেভাবেই আগুনের সূত্রপাত হোক না কেন, আসলে এগুলো কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এ যেন একেকটি হত্যাকা-, একেকটি স্বপ্নের মৃত্যু, যা কোনোক্রমেই কাম্য ও গ্রহণ করা যায় না। যদি দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যেত, তবে এ ধরনের অগ্নিকা- বা নীরব হত্যাযজ্ঞ ঘটত না। অগ্নিকা-ের মাধ্যমে হত্যাকা- ঘটলেও অন্যরা সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি অগ্নিকা- রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করত। এবং নিয়মানুযায়ী প্রত্যেকটি অগ্নিকা-ের পর তদন্ত কমিটি গঠিত হত ও তদন্ত রিপোর্ট গুলো আলোর মুখ দেখতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় নি। সবকিছু অদৃশ্য শক্তির কারণে হাওয়ায় মিশে যায়, যেন কারও কোনো দায় নেই। তবে এ ধরনের অগ্নিকা-ে মৃত্যুর মিছিল আমরা আর দেখতে চাই না, ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সব বাণিজ্যিক ভবন নতুন করে নির্মাণ বা মেরামতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button