সম্পাদকীয়

মূলহোতাদের ধরতে হবে

মাদকের ভয়ংকর রূপ

দেশব্যাপী মাদকের বিস্তার ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। কিশোর-কিশোরীরাও ক্রমে বেশি করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তাদের অভিযানে খুচরা বিক্রেতা, বাহক ও কিছু সেবনকারী ধরা পড়লেও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী গডফাদাররা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ক্ষেত্রে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বা গডফাদারদের অপরাধ তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সিআইডি ১০ গডফাদারকে আইনের আওতায় এনেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। তাঁদের বিপুল সম্পত্তি ক্রোকের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা ৩৫টি মামলার মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে এই ১০ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে সিআইডি মূল হোতা বা গডফাদারদের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ (ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা), ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। জব্দ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৮ কোটি টাকারও বেশি। এই ১০ গডফাদারের বিদেশে পাচার করা অর্থের পরিমাণ অন্তত ৮৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং তাঁদের ক্রোকের প্রক্রিয়াধীন মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। সিআইডি জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে মাদকের সব গডফাদারকেই আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক কারবারে যাঁরা অবৈধভাবে সম্পদ ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তাঁদের অবৈধ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। গডফাদারদের তথ্য দিয়ে সিআইডিকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, গডফাদারদের আইনের আওতায় এনে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বা মৃত্যুদ-। আইনে জেলা পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ট্রাইব্যুনালই এখনো গঠিত হয়নি। নানা কারণে বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায় এবং অনেক অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে। তারা পুনরায় নতুন উদ্যমে মাদক কারবারে নিয়োজিত হয়। আমরা আশা করি, মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁদের বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। একই সঙ্গে যেকোনো মূল্যে মাদকের অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button