সম্পাদকীয়

সতর্ক থাকতে হবে

তাপপ্রবাহ

কয়েকদিন ধরে দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকা মহানগরীতেও তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এমন তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবনে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের যেসব মানুষকে বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে পানি, শরবত ইত্যাদি পান করে প্রচুর মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ফ্লু, শ্বাসকষ্টের রোগীও বেড়ে গেছে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এই অবস্থা আরো কয়েক দিন চলতে পারে। গরম আরো কিছুটা বাড়তে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলমান দাবদাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি স্থানীয় কারণেও অঞ্চলবিশেষে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। নিকট অতীতে ঢাকা মহানগরী নিয়ে পরিচালিত দুটি গবেষণায় এমন কিছু কারণ উঠে এসেছে। একটি গবেষণায় ঢাকার ২৫টি এলাকাকে চরম উষ্ণ এলাকা বা ‘হিট আইল্যান্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপর গবেষণায় বলা হয়, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সবুজ বা গাছপালা ও জলাশয় কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা মহানগর। তাপপ্রবাহে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায়, শারীরিক নানা সমস্যা হয়। সাধারণত বেশি সমস্যায় পড়ে নি¤œ আয়ের মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, পরিবহন শ্রমিক এবং আরো অনেক পেশার মানুষ, যাদের সরাসরি রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তারা বেশি সমস্যাগ্রস্ত হয়। শিশু এবং বয়স্করাও বেশি ঝুঁকিতে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, এই সময়টায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু সে পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। অথচ অনেক স্থানেই সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানি না পাওয়ার কিংবা কোথাও কোথাও পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। আবহাওয়াবিদদের মতে, এমন তাপপ্রবাহ আরো বেশ কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। আমরা মনে করি, তাপপ্রবাহের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে জরুরি রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য। সুপেয় পানি সহজলভ্য করতে হবে। রোদ মাথায় নিয়ে যারা মাঠে-প্রান্তরে কাজ করতে বাধ্য হয়, তারা যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় সে জন্য স্থানীয়ভাবে নিয়োগদাতাদের বাধ্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের আরো বেশি স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button