চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে গ্রামীণ হাসপাতাল

দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দের হার সবচেয়ে কম। এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা-উপজেলাগুলোয় রয়েছে চিকিৎসকের মারাত্মক সংকট। ঢাকায় এবং এর আশপাশের জেলায় এ সমস্যা না থাকলেও উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ শূণ্য। দেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহণ যথেষ্ট ব্যয়ববহুল। বস্তুত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই ভরসা। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর আগাগোনা লক্ষ করা যায়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বারবার হুশিয়ারির পরও গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকদের উপস্থিতি পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের কিছু চিকিৎসক নানা কৌশলে শহরাঞ্চলে বদলির পাশাপাশি ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যদি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা না পাওয়া যায়, তাহলে তা পীড়াদায়ক বৈকি। যেহেতু স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তবে দেখা যাচ্ছে-সরকার যেভাবে চিন্তা করছে, বাস্তবে তার সঠিক প্রতিফলন ঘটছে না। এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান নানা অসংগতি ও দুর্নীতি। প্রচলিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশের অন্তত ৬৭ শতাংশ মানুষ পকেট থেকে টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। এ অবস্থার অবসানকল্পে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসক সংকট নিরসনের পাশাপাশি অন্যান্য অনিয়ম-অসংগতি দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকার যদি সত্যি সত্যি গ্রামাঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। তিনজনের কাজ একজনকে দিয়ে করানোর মানসিকতা পরিহার করতে হবে। অন্য ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ সম্ভব হলেও চিকিৎসায় সেটি চলে না। গ্রামে এমন অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে চিকিৎসক কিংবা অন্য সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যেতে উৎসাহিত হন।