বহুমুখী সংকটে নাজুক দেশের অর্থনীতি

দেশে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে সর্বস্তরে পুষ্টিহীনতা সমস্যা হচ্ছে প্রকটতর। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র ও সুযোগ-সম্ভাবনা অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও অর্ধ-দক্ষ কোটি যুবা-তরুণ বেকারত্বে হাবুডুবু খাচ্ছে। ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঋণ করে চলে। ডলারের অভাবে জ¦ালানি তেল আমদানির ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। নেই আমদানি-রপ্তানিকারকদের ব্যস্ততা। সারা দেশে উচ্চ তাপপ্রবাহ, টানা খরা-অনাবৃষ্টির বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানুষের কর্মক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া তো মানুষের চোখের দেখা। বোরো-ইরির আবাদ-উৎপাদন, আম-লিচুর ফলন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তো খালি চোখেই দৃশ্যমান। গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায় থেকে শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলে মানবসম্পদের গড় উৎপাদনশীলতা হ্রাস অথচ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং যন্ত্রণা। আর দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের মূল্য। আয়ের অন্যতম খাত পোশাক রপ্তানি নতুন করে উদ্বেগের মুখে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাও এখন কর্মস্থল, পথ-ঘাট থেকে শুরু করে সর্বত্র। তবে এই আলোচনা, সংবাদ, সরকারের প্রতিশ্রুতি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকছে। কোনো ভাবেই মূল্যবৃদ্ধি থামাতে পারছে না সরকার। কোনো কারণ ছাড়াই বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে চলছে অরাজকতা। ফলে সীমিত আয়ের কোটি কোটি মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। খরচ কমিয়ে তাদের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানে প্রতিবছর দেখা যায়, রোজা ও ঈদের কারণে যেসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, ঈদের পর তা কমতে থাকে। কিন্তু এবার ঈদের পরও পেঁয়াজ, আলু, ডিম, ভোজ্যতেল ও মসলার দাম বেড়ে চলেছে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষকে আরও বেশি দুর্ভাবনায় ফেলেছে। প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকে ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান ও চাল কেনা হয় না। এতে কৃষক অর্থাৎ উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশা করা যায়। কেননা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কথা শোনা গেলেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। যেখানে সরকার নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে কঠোর নজরদারি করবে, তা না করে দায়িত্বশীলরাই কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দেয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে জনগণের পকেট কাটার বাধাহীন অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো, যাতে কিছুটা কম দামে এগুলো দরিদ্র মানুষ পেতে পারেন। আর এই কার্যক্রম শহর এলাকায় সীমিত না রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা সহ অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।