কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এদেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষির ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের কৃষি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সাম্প্রতি বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে যেখানে বিশ্বের শিল্প নির্ভর এবং উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেখানে কৃষিনির্ভর আমাদের দেশ মাথা উঁচু করে রয়েছে সগৌরবে। তবে এ কথা সত্য কৃষি উন্নয়ন ও প্রযুক্তির বিকাশে বহু দেশ থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে যতটুকু এগিয়েছি সেখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আমাদের কৃষকই। কিন্তু দেশের কৃষির উন্নতি হলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি আমাদের কৃষকদের। বর্তমানে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষি ঋণ, কৃষি প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ, ফসল বীমাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছে। সেই সাথে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এরপরেও কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। কৃষি সুবিধা নিতে গেলে তাদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে, কৃষি ঋণ পেতেও তাদের নানা বেগ পেতে হয়। এমনকি গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বীজেও ভেজাল মেশানো, সারের মান নষ্ট আর ডিলারের কারসাজিতে পদে পদে ঠকছেন কৃষকরা। এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সুবিধা পায় না তারা। জমি খ- হওয়ার ফলে তাদের চাষ, মই, আগাছা দমন, সেচ ইত্যাদি কাজে যান্ত্রিকীকরণ সুবিধা কম। যেখানে যান্ত্রিকীকরণ সুবিধা পায় কৃষকরা সেখানেও যন্ত্রপাতির মালিকদের কাছে এক প্রকারের জিম্মি তারা। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে চাষ খরচ দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। সরকার কৃষকদের জন্য প্রণোদনার মাধ্যমে যে সার, বীজ দিয়ে থাকেন তা ঠিকমতো প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে পৌঁছায় না। বিতরণ কাজে নিয়োজিত কিছু অসাধু ব্যক্তি, স্থানীয় ক্ষমতাশীল নেতাকর্মী, অকৃষকদের প্রভাবে প্রান্তিক এসব কৃষকরা অনেকটা বঞ্চিত হয় প্রণোদনা থেকে। সেই সাথে মনিটরিং ব্যবস্থা নড়বড়ে হওয়া এবং ভেজাল বীজের ফলে কৃষককরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকরে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও তেমন কোনো লাভ হয় না। এ ছাড়া কৃষি শ্রমিকের তুলনায় অকৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি। একারণে ফসল রোপন, পরিচর্যা, কর্তন, মাড়াই, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার সময় কৃষকরা প্রতি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে কীটনাশক ও সার কিনতে পারে সেদিকে মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শদাতা কর্মকর্তাদের আরো আন্তরিক হয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যে যেন কৃষক ন্যায্য মূল্য পায়, সেজন্য সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এতে ধ্বংস হবে সিন্ডিকেট, টেকসই হবে দেশের কৃষি, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।