তরুণ প্রজন্মের উপর টিকটকের ক্ষতিকর প্রভাব

পারিবারিক ও সামাজিক গ-ি থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ। একঘেয়েমি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে এক একটি জীবন। আর এ ধারাকে গতিশীল করে তুলেছে স্মার্ট-ফোন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। টিকটক ও লাইকির মতো অ্যাপ বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম। একাউন্ট খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্ষতিকর কনট্যান্ট দেখাতে শুরু করে চীন ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক। মাত্র ৩৯ সেকেন্ডে এমন সব কনট্যান্ট দেখানো শুরু হয়, যা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায় দেখা যায় এসব কনট্যান্টে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ানোর মতো ছয়টি স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে ফেলে তরুণদের। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু দেশ এই টিকটক নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ১৫ কোটিরও বেশি টিকটক ব্যবহারকারী জনপ্রিয় এই অ্যাপ নিষিদ্ধ হতে পারে এমন এক সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। ইতোমধ্যে দেশটির প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে মন্টানা এই অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ করেছে। আত্মহত্যার পাশাপাশি এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক, নগ্নতা ও অশ্লীলতার মতো ভয়াবহ দিকগুলো। দেখা যায় শুধু টিকটকের ভিডিওই ব্যবহারকারীদের অ্যাপটিতে ধরে রাখতে প্রলুব্ধ করছে না। অ্যাপটির ফর ইউ সেকশনের কনটেন্টও তাদের অ্যাপটিতে মগ্ন রাখতে প্রলুব্ধ করছে। আবার দেখা যাচ্ছে টিকটক ও লাইকির জনপ্রিয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কমবয়সী মেয়েদের টিকটক স্টার বানিয়ে দেওয়া কথা বলে পরে অনৈতিক কর্মকা-ে জড়ানো, পাচার, ধর্ষণ, আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কিছু করাতে বাধ্য করা, এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। আবার ধর্ষণের পর আপত্তিকর ছবি তুলে করা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল। তরুণীদের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। বাকিরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ঠিক কতজন শিশু মোবাইল ফোনের মালিক এবং কতজন ইন্টারনেটের গ্রাহক তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও, এটা অনুমান করা যায় যে দেশের ৩ থেকে ৪ কোটি শিশু-কিশোরের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার আছে। এ থেকে বুঝা যায় যে দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। তাই এখনি সবাইকে সচেতন হতে হবে এই মরণঘাতী অ্যাপের বিরুদ্ধে। সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে তাদের হাতে স্মার্ট-ফোন তুলে দেওয়া থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকতে হবে। স্কুল কলেজে শিক্ষকদের এই টিকটকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটক নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে বাংলাদেশে টিকটক এবং লাইকির মতো ভিডিওভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করতে হবে।