সম্পাদকীয়

ধেয়ে আসছে এল নিনো, নিতে হবে আগাম প্রস্তুতি

এল নিনো হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি একটি জলবায়ুর ধরন, যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য, সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। লা নিনা হলো একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ হলো ছোট বালিকা। এল নিনোর ঠিক বিপরীত হচ্ছে লা নিনা। স্বাভাবিক অবস্থায় বাণিজ্য বায়ু (ট্রেড উইন্ড) প্রশান্ত মহাসাগরে নিরক্ষরেখা বরাবর পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। এটি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উষ্ণ জল এশিয়ার দিকে নিয়ে আসে। এই উষ্ণ জলের পরিবর্তে সেই স্থলে ঠা-া জল সমুদ্রের গভীর থেকে উত্থিত হয়। এল নিনোর সময় পশ্চিমমুখী বাণিজ্য বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। বায়ুর চাপ এবং বাতাসের গতির পরিবর্তনের কারণে উষ্ণ পৃষ্ঠের জল নিরক্ষরেখা বরাবর পূর্ব দিকে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে চলে যায়। উষ্ণ জলের আধিক্য ঠা-া জলের স্বাভাবিক উত্থান ঘটতে দেয় না। যার ফলে মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণতা লক্ষ করা যায় এবং বায়ুম-লীয় প্যাটার্নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারতীয় উপমহাদেশে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, একের পর এক শক্তিশালী ঝড়, তীব্র বজ্রপাত, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল অঞ্চলের পানিতে অতি লবণাক্ততা সহ সারা বছরই গরমের আধিক্য আবহাওয়ার বিশাল নেতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে যেখানে এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করতে হতো, সেই মরুর বুকে বৃষ্টি আর সবুজের চিত্র ফুটে উঠেছে। অপরদিকে বছরের অধিকাংশ সময়ে ঠা-া থাকা ইউরোপে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। দেশে এ বছর পুরো এপ্রিল মাসের তীব্র দাবদাহের প্রধান কারণ হিসেবে এল নিনোই দায়ী। তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে আউশ ধান এবং কাঁচা মরিচসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি, ফলে দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের চাষেও এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলো ছয়টি ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলো- উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকা, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা এবং নগর অঞ্চলগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। যা আশা করা যায় সফলতার মুখ দেখবে। পাশাপাশি জলবায়ুর এরূপ নেতিবাচক পরিবর্তন প্রতিরোধে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে এবং পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে এল নিলো বা লা নিনা এর মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button