স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

কোনো দেশের উন্নয়নে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও ব্রিজের পাশাপাশি জনগণের স্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে তাহলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট বরাদ্দের হিসাবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এবার মোট বাজেটের নিরিখে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে এ খাতে বরাদ্দ অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বস্তুত সংসারে ব্যয়ের একটি অংশ যায় চিকিৎসার পেছনে। আজকাল প্রতিটি পরিবারেই কোনো না কোনো সদস্যের জন্য বা একাধিক সদস্যের জন্য ওষুধপত্র কিনতে হয়। আর প্রতিনিয়ত এ ব্যয় বেড়ে চলেছে। ফলে অন্যান্য খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে। এমনকি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কাভারেজ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচারের ওপর নির্ভরতা এটি অর্জনের জন্য একটি বড় বাধা। এ বাধা দূর করতে সারা পৃথিবীতে কয়েক ধরনের উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑসবাইকে সর্বজনীন হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি সেবার মান উন্নয়ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে যাতে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে। এরপর মানুষকে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয় ওষুধে। চিকিৎসকরা রোগীকে যেসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন করেন সেসব ওষুধ রোগীকেই কিনতে হয়। তবে এসব ওষুধ যদি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে তাহলে চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে। অপারেশন বা ক্যানসারের ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়, এসব রোগ বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য ব্যয়। এগুলোকে যদি হাসপাতাল থেকে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় কমে আসবে। উন্নয়ন টেকসই হবে এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবায় উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে ভালো করতে হলে বেসরকারি খাতের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জরুরি। ১৯৮২ সালে প্রণীত বেসরকারি হাসপাতাল অর্ডিনেন্সের আধুনিকায়ন করা দরকার। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়কে শক্তিশালী করতে হবে। তাদের ক্ষমতায়ন করে জেলা ও উপজেলার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। একই সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি ও হয়রানিমুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে হবে।